Sahitter Adi Onto - ZerO to Infinity

Header Ads

Sahitter Adi Onto

 


আরো পড়ুনঃ প্রাচীন কাল থেকে সমসাময়িক কাল [চাকরীর পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ]

বাংলা সাহিত্যের সিলেবাস ও মান বণ্টন

যুগ

নম্বর

প্রাচীন ও মধ্য যুগ

০৫

আধুনিক যুগ-সমসাময়িক

১৫

প্রাচীন যুগ

চর্যাপদ

বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রাচীনতম শাখা হলো কাব্য। চর্যাপদ বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন। চর্যাপদ বাংলা ভাষার প্রথম কাব্য বা কবিতা। এটি বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনযগের একমাত্র নিদর্শন।

আবিষ্কারক

১৯০৭ সালে ডক্টর হরপ্রসাদ শাস্ত্রী নেপালের রাজ দরবারের গ্রন্থগার থেকে ‘চর্যাচর্যবিনিশ্চয়’ নামক পুঁথিটি আবিষ্কার করেন। চর্যাপদের সাথে ‘ডাকার্ণব’ ও ‘দোহাকোষ’ নামে আরও দুইটি বই নেপালের রাজ গ্রন্থাকার থেকে আবিষ্কৃত হয়। হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর সম্পাদনায় ‘বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ’ থেকে ১৯১৬ সালে সবগুলো বই একসাথে ‘হাজার বছরের পুরাণ বাংলা বৌদ্ধগান ও দোহা’ নামে প্রকাশিত হয়। সপ্তম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে চর্যাপদগুলো রচিত। বাংলার পাল বংশের রাজারা ছিলেন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। তাদের আমলে চর্যাগীতিগুলো বিকাশ ঘটেছিলো। ‘চর্যাপদ’ সহজিয়া বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সাহিত্য। নেপালে প্রাপ্ত পুঁথিটিতে গ্রন্থের নাম বর্ণিত হয়েছে ‘চর্যাচর্যবিনিশ্চয়’ বলে অর্থাৎ পুঁথির পদগুলোর সাহায্যে কোনটি চর্য (আচরণীয়) আর কোনটি অ-চর্য (অনাচরণীয়) তা বিনিশ্চিয় (নির্ণয়) তরা যেতে পারে। পাল বংশের পরে আসে সেন বংশ। সেন বংশ হিন্দুধর্ম এবং ব্রাহ্মণ্যসংস্কার রাজধর্ম হিসাবে গ্রহণ করে। ফলে বৌদ্ধ সিদ্ধচার্যেরা এদেশ হতে বিতাড়িত হয় এবং নেপালে আশ্রয় গ্রহণ করে। তাই বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন বাংলাদেশের বাহিরে নেপালে পাওয়া গেছে।

চর্যাপদের ভাষা

চর্যাপদের শব্দগুলো অপরিচিত, শব্দ ব্যবহারের রীতি বর্তমানের রীতি তেকে ভিন্ন – তাই এর কবিতাগুলো পড়তে বুঝতে কষ্ট হয়। চর্যাপদের ভাষাকে ‘সন্ধ্যা ভাষা বা সান্ধ্য ভাষা’ বলা হয়।সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায় তাঁর ‘বাঙলা ভাষার উৎপত্তি ও বিকাশ’ (The Origin and De  elopment of the Bengali language) নামক গ্রন্থে ধ্বনিতত্ত্ব ব্যায়াকরণ ও ছন্দ বিচার করে সিদ্ধান্ত নেন যে, চর্যাপদের ছন্দকে মাত্রাবৃত্তের ছন্দ বলা যায়। ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ সম্পাদিত ‘চর্যাপদ’ বিষয়ক গ্রন্থের নাম ‘Buddhist Mystic Songs’।তাঁর মতে, চর্যাপদের ভাষা বঙ্গ-কামরূপী। সেকালে বাংলা, উড়িয়া বা অসমিয়া ভাষার পার্থক্য ছিল সামান্য। তাই এই ভাষাগুলোকে বাংলার সহোদর ভাষাগোষ্ঠী বলা হয়। উল্লেখ যে, চর্যাপদ উড়িষ্যা, বিহার, আসাম, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের নিজ নজি ভাষা ও সাহিত্যের আদি নিদর্শন হিসাবে বিবেচিত মুনিদত্ত চর্যাপদের পদগলোকে টীকার মাধ্যমে ব্যাখ্যা করেন।

চর্যাপদের পদসংখ্যা

চর্যাপদের পদসংখ্যানিয়ে মতভেদ রয়েছে। কয়েকপাতা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় সর্বমোট সাড়ে ৪৬টি পদ পাওয়া গিয়েছে। ২৩ নং পদটি খন্ডিত আকারে পাওয়া গেছে অর্থাৎ শেষ অংশ পাওয়া যায়নি। ২৪, ২৫ ও ৪৮ নং পদগুলো পাওয়া যায়নি।

 

চর্যাপদের পদসংখ্যা

ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর মতে

৫০টি

সুকুমার সেনের মতে

৫১টি

 

চর্যাপদের পদকর্তা

ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর মতে

২৩ জন

সুকুমার সেনের মতে

২৪ জন

 


চর্যাপদের মোট পদকর্তা ২৪ জন। ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর মতে- চর্যাপদের প্রাচীনতম কবি শবরপা এবং আধুনিকতম কবি সরহ বা ভুসুকপা। ভুসুকুপা নিজেকে বাঙালি বলে পরিচয় দিয়েছেন। লুই, শবর, কুক্কুরী, বিরআ, গুণ্ডরী, চাটিল, ভুসুক, কাহৃ, কামলি, ডোম্বী, শান্তী, মহিত্ত, বীণা, সরহ, আজদেব, ঢেণ্ডণ, দারিক, ভাদে, তাড়ক, কঙ্কণ, জঅনন্দি, ধাম, তন্ত্রী ও লাড়ীডোম্বী। পদকর্তাদের নামের শেষে পা যুক্ত করা হয়েছে। যেমন লুই থেকে লইপা, শবর থেকে শবরপা। চর্যাপদ তথা বাংলা সাহিত্যের আদি কবি-

ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর মতে

শরবপা

হরপ্রসাদসহ অধিকাংশের মতে

লুইপা

 

পদকর্তা

রচিত পদের সংখ্যা

পদকর্তা

রচিত পদের সংখ্যা

কাহৃপা

১৩টি

শান্তিপা

২টি

ভুসুকুপা

৮টি

কবরীপা

২টি

সরহপা

৪টি

অবশিষ্টরা

প্রত্যেকে একটি করে

লুইপা

২টি

লাড়ীডোম্বীপা

কোন পদ পাওয়া যায়নি

রচনাকাল

ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর মতে

৬৫০ খ্রিস্টাব্দে

ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়সহ অধিকাংশের মতে

৯৫০ খ্রিস্টাব্দে

চর্যাপদের বয়স

ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর মতে

(২০২০-৬৫০) বছর = ১৩৭০ বছর

ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়সহ অধিকাংশের মতে

(২০২০-৯৫০) বছর = ১০৭০ বছর

 


চর্যাপদের নিদর্শন

‘আলি এঁ কালি এঁ বাট রুন্ধেলা

তা দেখি কাহৃ বিমনা ভইলা।’ (রচয়িতা: কাহৃপা)

‘টালত মোর ঘর নাহি পড়বেশী,

হাড়ীত ভাত নাহি নিতি আবেশী।’ (রচয়িতা: ঢেণ্ডপা)

চর্যাপদের ৩৩ নং পদের এ পক্তিতে ‘দারিদ্রক্লিষ্ট জীবনের চিত্র’ ফুটে উঠেছে।

‘আপনা মাংসে হরিণা বৈরী’। (রচয়িতা : ভুসুকুপা)

‘চঞ্চল চীএ পইঠ কাল’।(রচয়িতা: লুইপা) [‘অভিসময়বিভঙ্গ’ গ্রন্থের রচয়িতা : লুইপা ]

‘কমল মধু পিবিবি ধোকইন ভোমরা।’(রচয়িতা : মৎস্যেন্দ্রনাথ বা মীননাথ)। তাঁর চর্যাপদে কোন পদ নেই। তবে ২১ সংখ্যক পদের টীকায় কেবল চারটি পক্তির উল্লেখ আছে।)

ডাক ও খনার বচন

ডাক ও খনার বচন’ কে বাংলা সাহিত্যের আদিযগের সৃষ্টি বলে ধরা হয়। তবে এর কোন লিখিত নিদর্শন নেই বর্তমানে। মুখে মুখে প্রচলিত ছড়া জাতীয় এ নমুনাকে লোকসাহিত্যের আদি নদির্শন হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

 

ডাকের বচন

জ্যোতিষ ক্ষেত্রতত্ত্ব ও মানব চরিত্রের ব্যাখ্যা প্রাধান্য পেয়েছে।

খনার বচন

কৃষিও আবহাওয়ার কথা প্রাধান্য পেয়েছে।

মধ্যযুগ (১২০১-১৮০০)

মধ্যযুগের শ্রেনিবিভাগ

বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগ ১২০১ থেকে ১৮০০ সাল পর্যন্ত বিস্তৃত। ১২০৪ সালে বাংলাদেশে প্রথম মুসলমান শাসনের সূত্রপাত এবং ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে ইংরেজদের বিজয়ে তার অবসান হয়। তাই বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগের সবটুকুই মুসলিম শাসনামলের অন্তর্গত।

মধ্যযুগকে তিনটি শ্রেনীতে বিভক্ত করা হয়েছে। যথা:

১. তুর্কি যুগ (১২০১-১৩৫০)

২. সুলতানি যুগ (১৩৫১-১৫৭৫)

৩. মোগল শাসন (১৫৭৬-১৭৫৭)

তুর্কি যুগ (১২০১-১৩৫০)

বাংলা সাহিত্যে মধ্যযুগের শুরুতেই ১২০১ থেকে ১৩৫০ সাল পর্যন্ত সময়কে তথাকথিত ‘অন্ধকার যুগ’ বলে একটি বিতর্কিত বিষয়ের অবতারণা করা হয়েছে। তুর্কি শাসকদের সময়কে বাংলা সাহিত্যের অন্ধকার যুগ বলা হয়।

তুর্কি যুগকে প্রধানত ভাষা গঠনের যুগ ছিল বলে মনে করা হয়। অন্ধকার যুগে কোন সাহিত্য সৃষ্টি হয়নি একথাও সত্য নয়।এ সময়ে বাংলা সাহিত্যের ব্যাপক নিদর্শন পাওয়া না গেলেও অন্যান্য ভাষায় সাহিত্য সৃষ্টির নিদর্শন বর্তমান থাকাতে অন্ধকার যুগের অপবাদের অসারতা প্রমানিত হয়। অন্য ভাষায় রচিত গ্রন্থ-

 

শূণ্যপুরাণ: রামাই পণ্ডিত রচিত ধর্মপূজার শাস্ত্রগ্রন্থ। ‘শূণ্যপুরাণ’ গদ্য-পদ্য মিশ্যিত চম্পূকাব্য ‘নিরঞ্জনের রুষ্মা’ শূন্যপুরাণ কাব্যের অংশ বিশেষ।

সেক শুভোদয়া: রাজা লক্ষণ সেনের সভাপতি হলায়ূধ মিশ্র রচিত ‘সেক শুভোদয়া’ সংস্কৃত গদ্যপদ্যে লেখা চম্পূকাব্য।

 সুলতানি যুগ

পাঠান সুলতানগণ মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে পৃষ্ঠপোষকতায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। এই সময়ে গৌড়ীয় শাহী দরবার বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের সাংস্কৃতিক কেন্দ্ররূপে গড়ে উঠেছে। গৌড়কে কেন্দ্র করে এই সময়ে বাংলা সাহিত্যের বিকাশের গুরুত্ববিবেচনা করে ড. দীনেশচন্দ্র সেন এই আমলকে ‘গৌড়ীয় যুগ’ও বলে অভিহিত করেন। এসময়ে রুকনউদ্দীন বরবক শাহ এর পৃষ্ঠপোষকতায় জৈনুদ্দীন ‘রসুলবিজয়’ কাব্য এবং আলাউদ্দিন হোসেন শাহের পৃষ্ঠপোষকতায় বিপ্রদাস পিপিলাই ‘মনসাবিজয়’ কাব্য রচনা করেন।

মোগল যুগ

 

আরাকান রাজসভার পৃষ্ঠপোষকতায় মুসলমান কবিগণ প্রণয়কাব্য রচনা করে বাংলা সাহিত্যে স্বতন্ত্র্য ধারার প্রবর্তন করেন।

শ্রীকৃষ্ণকীর্তন

‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের প্রথম ও শ্রেষ্ঠ নিদর্শন। এটি সর্বজন স্বীকৃত ও খাঁটি বাংলা ভাষায় রচিত প্রথম কাব্য। কাব্য পুথিঁটির রচয়িতা বড়ু চণ্ডীদাস (ছদ্মনাম-অনন্ত বড়ু)। বড়ু চণ্ডীদাস মধ্যযুগের আদি বা প্রথম কবি।কাব্যটি বাংলা ভাষায় রচিত কোনো লেখকের প্রথম একক গ্রন্থ। কবি চতুর্দশ শতাব্দীর শেষ দিকে কাব্যটি রচনা করেন। পুঁথিতে প্রাপ্ত একটি চিরকুট অনুসারে এই কাব্যের প্রকৃত নাম ‘শ্রীকৃষ্ণসন্দর্ভ’। ১৯০৯ সালে ‘বসন্তরঞ্জন রায় বিদ্বদ্বল্লভ’ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলার কাকিল্যা গ্রামের এক গৃহস্থ বাড়ির গোয়ালঘর থেকে পুঁথিটি উদ্ধার করেন। ১৯১৬ সালে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে বসন্তরঞ্জন রায়ের সম্পাদনায় কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশিত হয়।

‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ কাব্যেরপ্রধান চরিত্র রাধা (জীবাত্মা বা প্রাণিকূল), কৃষ্ণ (পরমাত্মা বা ঈশ্বর) ও বড়াই (প্রেমের দূতী)।কাব্যটি মোট ১৩ খন্ডের।‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ পাঁচালী করে না গেয়ে নাটগীত হিসেবে নৃত্য ও অভিনয়ের মাধ্যমে গাওয়া যেত।পুঁথিটিকে তাই ‘ঝুমুর’ জাতীয় লৌকিক নাটগীতের প্রাচীনতম নিদর্শন হিসেবে অভিহিত করা যায়।

মৌলিক সাহিত্য

পদ বা পদাবলি

মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ রচনা ‘বৈষ্ণব পদাবলি’। বৌদ্ধ বা বৈষ্ণবীয় ধর্মের গূঢ় বিষয়ের বিশেষ সৃষ্টি পদ বা পদাবলি। পদাবলি সাহিত্য বৈষ্ণবতত্ত্বের রসভাস্য।বৈষ্ণব গীতিতে পাঁচটি রসের উল্লেখ পাওয়া যায়। যথাঃ -শান্ত, দাস্য, সখ্য, বাৎসল্য এবং মধুর। বৈষ্ণবদের উপাস্য ভগবান শ্রীকৃষ্ণ। তাঁর আনন্দময় তথা প্রেমময় প্রকাশ ঘটেছে রাধার মাধ্যমে।‘বৈষ্ণব পদাবলি’ রাধা ও কৃষ্ণের আর্কষণ-বিকর্ষণের বিচিত্র অনুভূতি সম্বলিত এক প্রকার গান। তাই রাধাকৃষ্ণ প্রেম-লীলার মাধুর্য পদাবলির গানের উপজীব্য হয়েছিল।শ্রীকৃষ্ণ ও তার ভক্তদের যে মধুর সম্বন্ধ এবং এই প্রিয় সম্বন্ধজনিত পরস্পরের মধ্যে যে সম্ভোগ ভাব তার নাম মধুর রস। বৈষ্ণব সমাজে বৈষ্ণব পদাবলি ‘মহাজন পদাবলি’ এবং বৈষ্ণব পদকর্তাগণ ‘মহাজন’ নামে পরিচিত ছিল। পদাবলির আদি কবি বিদ্যাপতি। তিনি ব্রজবুলি ভাষায় পদগুলো রচনা করেন।বাংলা ভাষায় বৈষ্ণব পদাবলির আদি রচয়িতা বড়ু চণ্ডীদাস।জ্ঞানদাস, গোবিন্দদাস, লোচনদাস, বলরামদাসের নামও বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।আধুনিকযুগের কবিদের মধ্যে রবীন্দ্রনাথের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

ব্রজবুলি ভাষা

ব্রজবুলি ভাণা মূলত মৈথিলি ও বাংলা মিশ্রণে এক মধুর সাহিত্যিক ভাষা। বৈষ্ণব পদাবলির অধিকাংশই রচিত হয়েছে ‘ব্রজবুলি’ নামক একটি কৃত্রিম মিশ্র ভাষায়। এতে কিছু হিন্দি শব্দও আছে। ব্রজলীলা সম্পর্কিত পদাবলির ভাষা -‘ব্রজবুলি’ নামে পরিচিত। ‘ব্রজবুলি’ কখনও মানুষের মুখের ভাষা ছিলোনা। সাহিত্যকর্ম ব্যতিত অন্যত্র এর কোন ব্যবহার নেই।

Download [update-21/06/25]

মঙ্গলকাব্য

বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগে বিশেষ এক শ্রেণির ধর্মবিষয়ক আখ্যান কাব্য হলো ‘মঙ্গলকাব্য’। ‘মঙ্গল’ শব্দটির আভিধানিক অর্থ ‘কল্যাণ’। মঙ্গলকাব্য রচনার মূল কারণ স্বপ্নদেবী কর্তৃক আদেশ লাভ। সে কাব্য দেবতার আরাধনা, মাহাত্ম্য-কীর্তন করা হয়; যে কাব্য শ্রবণেও মঙ্গল হয় এবং বিপরীতটিতে অমঙ্গল।

যে কাব্য মঙ্গলাধার, এমন কি, যে কাব্য ঘরে রাখলেও মঙ্গল হয় তাকে বলা হয় মঙ্গলকাব্য। বাংলা সাহিত্যের নানা শ্রেণির কাব্যে মঙ্গল কথাটির প্রয়োগ থাকলেও কেবল বাংলা লৌকিক দেবতাদের নিয়ে রচিত কাব্যই মঙ্গলকাব্য

 নামে অভিহিত হয়। মঙ্গলকাব্যে প্রধানত মনসা ও চণ্ডী এই দুই দেবতার প্রাধান্য বেশি। উল্লেখযোগ্য মঙ্গলকাব্য হলো- মনসামঙ্গল, ধর্মমঙ্গল, চণ্ডীমঙ্গল ও অন্নদামঙ্গল প্রভৃতি।

‘চৈতন্যমঙ্গল’, ‘গোবিন্দমঙ্গল’ প্রভৃতি কাব্যের সাথে মঙ্গল নাম থাকলেও এদের সাথে মঙ্গলকাব্যের কোন সর্ম্পক নেই। এগুলো বৈষ্ণব সাহিত্যের অংশ। বিহারীলাল চক্রবর্তীর রচিত ‘সারদামঙ্গল’ মঙ্গলকাব্য নয়, এটি একটি আধুনিক যুগের কাব্য।

মঙ্গলকাব্যগুলোকে শ্রেণিগত দিক থেকে দ’ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে-

ক) পৌরণিক শ্রেণীঃ গৌরীমঙ্গল, ভবানীমঙ্গল, দুর্গামঙ্গল, অন্নদামঙ্গল, কমলামঙ্গল, গঙ্গামঙ্গল, চণ্ডিকামঙ্গল প্রভৃতি।

খ) লৌকিক শ্রেণীঃ শিবায়ন বা শিবমঙ্গল, মনসামঙ্গল, চণ্ডীমঙ্গল, শীতলামঙ্গল, রায়মঙ্গল, কালিকামঙ্গল বা বিদ্যাসুন্দর, ষষ্ঠীমঙ্গল, সারদামঙ্গল, সূর্যমঙ্গল প্রভৃতি।

মনসামঙ্গল

সাপের অধিষ্ঠাত্রী দেবী মনসা। তাঁর অপর নাম তেকা ও পদ্মাবতী। লৌকিক ভয়ভীতি থেকে এ দেবীর উদ্ভব। এই দেবীর কাহিনী নিয়ে রচিত কাব্য ‘মনসামঙ্গল’ নামে পরিচিত। কোথাও তা ‘পদ্মাপুরাণ’ নামেও পরিচিত। এ কাব্যের প্রধান চরিত্র চাঁদ সওদাগর, বেহুলা এবং লক্ষীন্দর। পূজা দিতে অস্বীকার করায় বণিক চাঁদ সওদাগরকে মনসা দেবী ধনহারা ও তার পুত্র লক্ষীন্দরকে সর্পদংশনে হত্যা করে পুত্র হারা করে। বেহুলা লক্ষীন্দরের নব পরিণীতা। কানা হরিদত্ত মনসামঙ্গল তথা মঙ্গলকাব্যেরে আদিকবি। এছাড়াও অন্যান্য কবির মধ্যে নারায়ন বে, বিজয় গুপ্ত, বিপ্রদাস পিপিলাই, দ্বিজ বংশীদাস, কেতনদাস, ক্ষেমানন্দের নাম বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য।

চণ্ডীমঙ্গল

চণ্ডী দেবীর কাহিনী অবলম্বনে রচিত চণ্ডীমঙ্গল কাব্য এ দেশে যথেষ্ট জনপ্রিয়তা অর্জন করেনছে। মাণিক দত্ত চণ্ডীমঙ্গলের আদিকবি। চণ্ডীমঙ্গলের শ্রেষ্ঠ কবি ‘কবিকঙ্কন মুকুন্দরাম চক্রবর্তী’। ভাড়ুদত্ত, ফুল্লুরা, ধনপতি সদাগর প্রভৃতি চণ্ডীমঙ্গল কাব্যের প্রধান চরিত্র। ধনপতি সদাগর ছিলেন উজানীনগরের অধিবাসী।

ধর্মমঙ্গল

‘ধর্মমঙ্গল’ কাব্যের আদিকবি ময়ূরভট্ট। অন্যান্য কবিদের মধ্যে রয়েছে – রূপরাম চক্রবর্তী, খেলারাম চক্রবর্তী, শ্যাম পণ্ডিত, সীতারাম দাস, রাজারাম দাস এবং সহদেব চক্রবর্তী নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ধর্মঠাকুরের মাতাত্ম্য প্রচারের জন্য ‘ধর্মমঙ্গল’ কাব্য ধারার সূত্রপাত হয়েছে। ধর্মমঙ্গল কাব্যের দুটি কাহিনী হলো – রাজা হরিশ্চন্দের কাহিনী এবং লাউসেনের কাহিনী।

অন্নদামঙ্গল

চণ্ডী ও অন্নদা অভিন্ন একই দেবীর দুইনাম। এ দেবীর কাহিনীই অন্নদামঙ্গলে স্থান পেয়েছে। অন্নদামঙ্গল কাব্যের রচয়িতা ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর। কবি ভারতচন্দ্র রায়গুণাকর (প্রথম নাগরিক কবি) অষ্টাদশ শতকের তথা মধ্যযুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি। ভারতচন্দ্র প্রাচীন ভুরসূর পরগনার পেঁড়ো অথবা আধুনিক হাওড়া জেলার পাণ্ডুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি কৃষ্ণনগর রাজসভার কবি ছিলেন। মহারাজ কৃষ্ণচন্দের আদেশে তিনি তাঁর শ্রেষ্ঠ কীর্তি ‘অন্নদামঙ্গল’ কাব্যটি রচনা করেন। রাজা তাকে ‘রায়গুণাকর’ উপাধিতে ভূষিত করেন।‘অন্নদামঙ্গল’ কাব্যটি তিন খন্ডে রচিত। যথা – শিবনারায়ণ, কালিকামঙ্গল এবং মানসিংহ-ভবানন্দ উপাখ্যান।

ভারতচন্দ্র রায়গুণাকরে অন্যতম বিখ্যাত গ্রন্থ ‘সত্য পীরের পাঁচালী’।

‘অন্নদামঙ্গল’ কাব্যের অমর উক্তি –

১. “আমার সন্তান যেন থাকে দুধে-ভাতে”-ঈশ্বরীপাটনীর এ প্রার্থনা করেছেন।

২. “বড়র পিরীতি বালির বাঁধ! ক্ষণে হাতে দড়ি, ক্ষণেকে চাঁদ।”

৩. মন্ত্রের সাধন কিংবা শরীর পতন।

৪. নগর পড়িলে দেবালয় কি এড়ায়।

জীবনী সাহিত্য

শ্রী চৈতন্য দেব একজন ধর্মপ্রচারক হলেও বাংলা সাহিত্যে তাঁর প্রভাব ছিল অপরিসীম। এই মহাপুরুষ বাংলায় একটি পঙক্তি না লিখলেও তাঁর নামে একটি যুগের সৃষ্টি হয়েছে। বাংলা সাহিত্যে চৈতন্য জীবনীগ্রন্থ ‘কচড়া’ নামে পরিচিত।

‘কচড়া’ শব্দের শাব্দিক অর্থ ডায়রি বা দিনলিপি।

মধ্যযুগ

১. প্রাক চৈতন্য যুগ (১৩৫১-১৫০০)

২. চৈতন্য যুগ (১৫০১-১৬০০)

৩. চৈতন্য পরবর্তী যুগ (১৬০১-১৮০০)

 

কচড়া

রচয়িতা

তথ্য কণিকা

চৈতন্যভাগবত

বৃন্দাবন দাস

বাংলা ভাষায় শ্রীচৈতন্যের প্রথম জীবনীকাব্য

চৈতন্যমঙ্গল

লোচন দাস

 

চৈতন্যচরিতামৃত

কৃষ্ণদাস কবিরাজ

বাংলা ভাষায় সর্বাপেক্ষা তথ্যবহুল শ্রীচৈতন্য জীবনী

নাথসাহিত্য

প্রাচীন কাল থেকে এ দেশে শিব উপানক এক শ্রেণীর যোগী সম্প্রদায় ছিল, তাদের ধর্মের নাম নাথধর্ম। নাথধর্মের কাহিনী অবলম্বনে রচিত আখ্যায়িকা কাব্য ‘নাথসাহিত্য’ নামে পরিচিত। শেখ ফয়জুল্লাহ এ ধারার আদিকবি। তাঁর নাথধর্মবিষয়ক আখ্যানকাব্য ‘গোরক্ষবিজয়’।

মর্সিয়া সাহিত্য

‘মর্সিয়া’ এক ধরনের শোককাব্য বা শোকগীতি বা বিলাপসঙ্গীত। ‘মর্সিয়া’ কথাটি আরবি, এর অর্থ শোক প্রকাশ করা। মধ্যযুগে বাংলাসাহিত্যে ‘মর্সিয়া সাহিত্য’ নামে এক ধরনের শোককাব্য বিস্তৃত জুড়ে আছে। আরবি সাহিত্যে মর্সিয়ার উদ্ভব নানা ধরনের শোকাবহ ঘটনা থেকে হলেও পরে তা কারবালার প্রান্তরে নিহত ইমাম হোসেন ও অন্যান্য শহীদকে উপজীব্য করে লেখা কবিতা ‘মর্সিয়া’ নামে আখ্যায়িত করা হয়। মর্সিয়া ধারা উল্লেখ্যযোগ্য কবি নিম্নরূপ:

শেখ ফয়জুল্লাহ  : এ ধারায় প্রথম কবি। বিখ্যাত কাব্য ‘জয়নবের চৌতিশা’।

দৌলত উজির বাহরাম খান : আনুমানিক ১৬ শতকে চট্টগ্রাম জেলার ফতেয়াবাদ (মতান্তরে জাফরাবাদ) এ জন্মগ্রহণ করেন। বিখ্যাত কাব্য ‘জঙ্গনামা’। কারবালার বিষাদময় যুদ্ধবিগ্রহ এ কাব্যের বিষয়বস্তু।

সেবরাজ  : বিখ্যাত কাব্য ‘কাশিমের লড়াই’।

লোক সাহিত্য

‘লোকসাহিত্য’ বলতে জনসাধারণের মুখে মুখে প্রচলিত গাঁথাকাহিনী, গান, লোকগীতি, রূপকথা, উপকথা, ছড়া, ধাঁধাঁ, প্রবাদ ইত্যাদিকে বুঝানো হয়। সাধারণত কোনো সম্প্রদায় বা জনগোষ্ঠীর অলিখিত সাহিত্যই লোকসাহিত্য। ‘ডাক ও খনার বচন’ কে লোকসাহিত্যের আদি নিদর্শন হিসাবে বিবেচনা করা হয়। ড. দীনেশচন্দ্র সেন ‘লোকসাহিত্য’ সংগ্রহে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।


কোন মন্তব্য নেই

Thank You

New Posts

Job Math for Written

  চাকরীর পরীক্ষায় একাডেমিক বই থেকে সরাসরি অংক আসে। এই নোটে ক্লাস ৮ ও ৯ এর গুরুত্বপূর্ণ অধ্যাইয়ের বাছাই করা ৩২০টি অংক সমাধান করে দেওয়া হয়েছ...

fpm থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.