বাংলা সাহিত্য প্রাচীন যুগ ও চর্যাপদ - ZerO to Infinity

Header Ads

বাংলা সাহিত্য প্রাচীন যুগ ও চর্যাপদ


 

বিসিএস এর সিলেবাস

প্রাচীন যুগ

০৩

মধ্যযুগ

০২

 

০৫

*প্রাচীন যুগ থেকেই প্রশ্ন বেশি আসে। তবে এই দুই যুগ মিলিয়ে ০৫ মার্কের প্রশ্ন হয়।এই নোটে শুধু প্রাচীন ও মধ্যযুগ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

বাংলা সাহিত্যের যুগবিভাগ

যুগ

ব্যাপ্তি

প্রাচীন যুগ

৬৫০/৯৫০ – ১২০০ খ্রিষ্টাব্দ

মধ্যযুগ

১২০০ – ১৮০০ খ্রিষ্টাব্দ

প্রাকচৈতন্য যুগ

১২০০ – ১৫০০ খ্রিষ্টাব্দ

অন্ধকার যুগ

১২০১ – ১৩৫০ খ্রিষ্টাব্দ

চৈতন্য যুগ

১৫০০ – ১৬০০ খ্রিষ্টাব্দ

চৈতন্য পরবর্তী যুগ

১৬০০ – ১৮০০ খ্রিষ্টাব্দ

আধুনিক যুগ

১৮০০ - বর্তমান



বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস হাজার বছরের অধিক কালের ইতিহাস। এই হাজার বছরের অধিক কালের ইতিহাস কে প্রধানতঃ ৩ ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১. প্রাচীন যুগ, ২. মধ্যযুগ ৩. আধুনিক যুগ

. প্রাচীন যুগঃ (৬৫০/৯৫০ ১২০০ খ্রী)
শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানী – ড: মুহম্মদ শহীদুল্লাহ
ড:মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন যুগে (৬৫০-১২০০ খ্রীঃ / সপ্তম শতাব্দী থেকে দ্বাদশ শতাব্দী) প্রায় ৫৫০ বছর
ড: সুনীতিকুমার চট্রোপধ্যায়ের মতে বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন যুগ (৯৫০-১২০০ খ্রীঃ / দশম শতাব্দী থেকে দ্বাদশ শতাব্দী) প্রায় ২৫০ বছর।
প্রাচীন যুগের একমাত্র সাহিত্যের নিদর্শন – চর্যাপদ।

অন্ধকার যুগঃ (১২০১-১৩৫০ খ্রী.)

অন্ধকার যুগ এমন একটি যুগ যে যুগে বাংলা সাহিত্যের কোনও নিদর্শন পাওয়া যায়নি।

অন্ধকার যুগ সৃষ্টি করার জন্য দায়ী করা হইছে তুর্কি সেনাপতি ইখতিয়ার উদ্দিন বিন মোহাম্মদ বখতিয়ার খিলজী।তিনি ১২০১ সালে মতান্তরে ১২০৪ সালে হিন্দু সর্বশেষ রাজা লক্ষণ সেন কে পরাজিত করে এ অঞ্চলে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা করে।অন্ধকার যুগে বাংলা সাহিত্যের কোনও নিদর্শন না মেললেও সংস্কৃত সাহিত্যের নিদর্শন মেলে। যেমনঃ

১/ রামাই পন্ডিতের “শূণ্যপুরাণ” ২/ হলায়ূধ মিশ্রের “সেক শুভোদয়া”

মধ্যযুগের বেশ কিছু কাব্যঃ
১. শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য, ২. বৈষ্ণপদাবলী, ৩. মঙ্গলকাব্য, ৪. রোমান্টিক কাব্য
৫. আরাকান রাজসভায় বাংলা সাহিত্য, ৬. পুঁথি সাহিত্য, ৭. অনুবাদ সাহিত্য
৮. জীবনী সাহিত্য, ৯. লোকসাহিত্য, ১০. মর্সিয়া সাহিত্য, ১১. করিয়ালা ও শায়ের
১২. ডাক ও খনার বচন, ১৩. নথিসাহিত্য

মধ্যযুগে অন্য সাহিত্যের কিছু নমুনা পাওয়া যায়ঃ
১. পত্র ২. দলিল দস্তাবেজ, ৩. আইন গ্রন্থের অনুবাদ। তবে এগুলো সাহিত্যের মানে উত্তীর্ণ হতে পারে নি।

মধ্যযুগে মুসলিম কবিগণ রচনা করেন রোমান্টিক কাব্য পক্ষান্তরে হিন্দুধর্মাবলী কবিগণ রচনা করেন দেব দেবী নির্ভর আখ্যান / কাহিনী কাব্য। মধ্যযুগে সতের শতকে বাংলার বাইরে আরাকান রাজসভায় বাংলাভাষা ও সাহিত্যের চর্চা হয়।মধ্যযুগে দুটো বিরাম চিহ্ন ছিল, বিজোড় সংখ্যক লাইনের পর এক দাড়ি,জোড় সংখ্যক লাইনের পর দুই দাড়ি [১৭৬০ সালে ভারতচন্দ্র মারা যাবার পর মধ্যযুগের সমাপ্তি হয় … প্রশ্ন উঠতে পারে ভারত চন্দ্র মারা যাবার সাথে সাথে মধ্যযুগের পতনের কি সম্পর্ক? ভারতচন্দ্র মারা যাবার পর মধ্যযুগের সমাপ্তি হয় কারণ মঙ্গলকাব্যের চারশ বছরের কাব্যধারার সমাপ্তি … কিন্তু এই কারনের সাথে আরও একটা কারণ জড়িত … রাজনৈতিক ভাবেও এই এলাকার পটভূমি পরিবর্তন হতে থাকে। ১৭৫৭ সালে পলাশির প্রান্তরে সিরাজউদ্দৌলা পরাজিত হওয়ার মধ্যদিয়ে ইংরেজ তথা বৃটিশদের শাসন হয় তখন সাহিত্যের আবির্ভাব হয় যা আধুনিক সাহিত্য ধারার প্রবর্তন করার অন্যতম কারণ]

যুগসন্ধিক্ষণঃ (১৭৬১-১৮৬০ খ্রী.)
যুগসন্ধিক্ষণ মানে দুই যুগের মিলন। যুগ সন্ধিক্ষণ এমন একটি যুগ যে যুগে মধ্য যুগ এবং আধুনিক যুগের মিশ্র বৈশিষ্ট পাওয়া যায়। যুগসন্ধিক্ষণের কবি ইশ্বরচন্দ্র গুপ্ত ইশ্বরচন্দ্র গুপ্তকে স্ববিরোধী কবি ও বলা হয়েছে।

[স্ববিরোধী বলার কারণঃ প্রথমদিকে তিনি ইংরেজদের শাসনের বিরুদ্ধে লেখলেও শেষের দিকে তার কাব্যে ইংরেজদের শাসনের প্রশংসা করেছেন]

আধুনিক যুগঃ (১৮০১-বর্তমান)

আধুনিক যুগকে দু ভাগে ভাগ করা যায়

১. উন্মেষ পর্ব (১৮০১-১৮৬০ খ্রী.)

২. বিকাশ পর্ব (১৮৬১ - বর্তমান)

গদ্য সাহিত্য হচ্ছে আধুনিক যুগের সৃষ্টি

১. গল্প ২. উপন্যাস ৩. নাটক ৪. প্রহসন ৫. প্রবন্ধ

প্রাচীন যুগের সাহিত্যের একমাত্র বৈশিষ্ট্য ছিল – ব্যাক্তি
মধ্য যুগের সাহিত্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল – ধর্ম
আধুনিক যুগে সাহিত্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল – মানবিকতা / মানবতাবাদ / মানুষ
সবচেয়ে বেশী সমৃদ্ধ / সমাদৃত – ১. কাব্য (গীতিকাব্য), ২. উপন্যাস, ৩. ছোটগল্প

বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন যুগ (৬৫০ – ১২০০ খ্রিষ্টাব্দ)

বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম রূপ / খাখা হচ্ছে - কাব্য

আরো পড়ুনঃ- বাংলা সাহিত্য মধ্যযুগ

বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন যুগ (৬৫০ ১২০০ খ্রিষ্টাব্দ)

বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম রূপ / শাখা হচ্ছে – কাব্য

বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম সৃষ্টি – ছড়া

প্রাচীন যুগে সমাজ জীবনে প্রভাব ছিলো – ধর্মীয় চেতনা ও গোষ্ঠী কেন্দ্রিকতা

বাংলা সাহিত্যের আদিযুগের আরো একটা সৃষ্টি – ডাক ও খনার বচন (এটি কৃষিকাজের জন্য উপযোগী সাহিত্য)

ডাকের বচন – এটিতে জ্যোতিষ ক্ষেত্রতত্ত্ব ও মানব চরিত্রের ব্যাখ্যা দেওয়া আছে।

খনার বচন – এটিতে কৃষি ও আবহাওয়ার কথা দেওয়া আছে। এটির মূলভাব হচ্ছে শুদ্ধ জীবনযাপন রীতি।

বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন, প্রাচীনতম নিদর্শন, প্রাচীনতম সাহিত্য, প্রাচীনতম পদ সংকলন, প্রথম গ্রন্থ, এই সবকিছু হচ্ছে – চর্যাপদ।

রূপকথা

প্রাচীনযুগে বাংলা সাহিত্যের উপকরণ হিসেবে পাওয়া যায় – রূপকথা। রূপকথা হচ্ছে শিশুতোষ গল্পকাহিনী এবং লোকসাহিত্যের জনপ্রিয় শাখা। বাংলা রূপকথার প্রথম সংগ্রাহক লালবিহারী দে। তিনি ১৮৭৫ সালে রূপকথার একটা ইংলিশ বই বের করেন যার নাম ছিলো Folk Tales of Bengal. তার উত্তরসূরি দক্ষিণারঞ্জন মিত্রমজুমদার বাংলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে রূপকথাগুলো সংগ্রহ করেন এবং এগুলোকে তিনি ঠাকুরমার ঝুলি ও ঠাকুরদাদার ঝুলি নামে দুই খন্ডে প্রকাশ করেন।

চর্যাপদের সংক্ষিপ্ত পরিচয়

অনেক প্রাচীন সাহিত্যকর্ম হলেও এটির আবিষ্কার খুব বেশিদিন আগের কথা না। ১৯০৭  খ্রীস্টাব্দে মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী নেপালের রাজদরবারের গ্রন্থশালা “রয়েল লাইব্রেরি” থেকে চর্যার একটি খণ্ডিত পুঁথি উদ্ধার করেন। মূলত ১৮৮২ সালে রাজা রাজেদ্র লাল মিত্র “Sanskrit Buddhist Literature in Nepal” গ্রন্থে চর্যাপদের অস্তিত্বের কথা বলেছিলেন। আর সেই সূত্র ধরে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী চর্যাপদ আবিষ্কারে উদ্দীপ্ত হন। চর্যাপদের সাথে ‘ডাকার্ণব’ এবং ‘দোহাকোষ’ নামে আরো দুটি বই নেপালের রাজ দরবারের গ্রন্থাগার হতে আবিষ্কৃত হয়। ১৯১৬ সালে সবগুলো বই একসাথে ‘হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গালা ভাষায় বৌদ্ধগান এবং দোহা’ নামে প্রকাশ করেন..পরবর্তীতে ১৯২৩ সালে বাংলা ১৩২৩ বঙ্গাব্দ কলকাতার বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে এটি প্রকাশিত হয়। বাংলা ভাষার প্রথম কাব্য/কাবিতা সংকলন চর্যাপদ। এটি বাংলা সাহিত্যের আদিযুগের একমাত্র লিখিত নিদর্শন..ড. হরপ্রসাদ শাস্ত্রী নেপালের রাজ দরবারের গ্রন্থাগার হতে ১৯০৭ সালে ‘চর্যাচর্য বিনিশ্চয়’ নামক পুথিটি আবিষ্কার করেন।এটি প্রকাশিত হবার পর পালি সংস্কৃত সহ বিভিন্ন ভাষাবিদ রা চর্যাপদকে নিজ নিজ ভাষার আদি নিদর্শন বলে দাবী করেন।
এসব দাবী মিথ্যা প্রমাণ করেন ড. সুনীতি কুমার চট্রোপাধ্যায় ১৯২৬ সালে The Origin and Development of Bengali Language গ্রন্থে চর্যাপদ এর ভাষা বিষয়ক গবেষণা করেন এবং প্রমাণ করেন চর্যাপদ বাংলা ভাষার আদি নিদর্শন।
১৯২৭ সালে শ্রেষ্ঠ ভাষা বিজ্ঞানী ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ চর্যাপদের ধর্মতত্ব বিষয়ক গবেষণা করেন এবং প্রমাণ করেন যে চর্যাপদ বাংলাসাহিত্যের আদি নিদর্শন। অনেকের মতে, চর্যাপদের আদিকবি লুইপা।

বর্ণনাঃ
চর্যাপদের মোট পদসংখ্যা ছিল ৫১ টি। ডঃ শহীদুল্লাহ বলেছেন ৫০টি। তবে ৫১টি সর্বজন স্বীকৃত।

এক একটি পদ সাধারণত সাধারণত ১০টি লাইন সহযোগে গঠিত।শুধুমাত্র ২১নং পদে লাইনসংখ্যা ৮টিএবং ৪৩ নং পদে লাইন সংখ্যা ১২টি।

চর্যাপদের ৫১টি পদের মধ্যে সাড়ে ছেচল্লিশটি পদ পাওয়া গিয়েছে, বাকি সাড়ে চারটি পদপাওয়া যায় নি। অনাবিষ্কৃত পদগুলি হল ১১, ২৩, ২৪, ২৫, ৪৮। এদের মধ্যে ২৩ তম পদের প্রথম ৬টি লাইন পাওয়া গিয়েছে বাকি ৪টি পাওয়া যায় নি।

সাহিত্যমানঃ
চর্যাপদের প্রথম পদ __” কা আ তরুবর পঞ্চ বি ডাল”

শবরপার একটি পদে দেখা যায় নরনারীর প্রেমের এক অপূর্ব চিত্রণ-

উঁচা উঁচা পাবত তঁহি বসই সবরী বালী।

মোরঙ্গি পীচ্ছ পরহিণ সবরী গীবত গুঞ্জরী মালী।।

উমত সবরো পাগল শবরো মা কর গুলী গুহাডা তোহৌরি।

ণিঅ ঘরণী ণামে সহজ সুন্দারী।।

ণাণা তরুবর মৌলিল রে গঅণত লাগেলি ডালী।

একেলী সবরী এ বণ হিণ্ডই কর্ণ কুণ্ডলবজ্রধারী।

(পদ ২৮, অর্থাৎ- উঁচু পর্বতে শবরী বালিকা বাস করে। তার মাথায় ময়ূরপুচ্ছ, গলায় গুঞ্জামালিকা। নানা তরু মুকুলিত হলো। তাদের শাখা-প্রশাখা আকাশে বিস্তৃত হলো। শবর-শবরীর প্রেমে পাগল হলো। কামনার রঙে তাদের হৃদয় রঙিন ও উদ্দাম। শয্যা পাতা হলো। শবর-শবরী প্রেমাবেশে রাত্রিযাপন করলো।)

আবার সমাজ ও মানুষের প্রতি অকৃত্রিম দরদও আধুনিক পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ঢেণ্ঢণের পদে দেখা যায়– “টালত মোর ঘর নাহি পরবেষী। / হাড়ীত ভাত নাঁহি নিতি আবেশী।” (পদ ৩৩, অর্থাৎ- টিলার উপর আমার ঘর, কোনও প্রতিবেশী নেই। হাঁড়িতেও ভাত নেই, তবু নিত্য অতিথি আসে।)

কোনও কোনও পদে নিছক দর্শনকথা অসামান্য চিত্ররূপের মাধ্যমে ফুটে উঠেছে।

চাটিল লিখছেন– “ভবণই গহণগম্ভীরা বেগেঁ বাহী। দুআন্তে চিখিল মাঝেঁ ন ঠাহী।” (পদ ৫, অর্থাৎ- ভবনদী গহন ও গম্ভীর অর্থাৎ প্রবল বেগে প্রবহমান। তার দুইতীর কর্দমাক্ত ও পিচ্ছিল।)

আবার কখনও বা তত্ত্বের ব্যাখ্যায় যে প্রহেলিকার অবতারণা করা হয়েছে, সেগুলিও অসামান্য সাহিত্যগুণমণ্ডিত হয়ে উঠেছে। যেমন: কুক্কুরীপাদ লিখেছেন– “দুলি দুহি পিটা ধরণ ন জাই। / রুখের তেন্তুলি কুম্ভীরে খাঅ।।” (পদ ২, অর্থাৎ- মাদী কাছিম দোহন করে দুধ পাত্রে রাখা যাচ্ছে

না। গাছের তেঁতুল কুমিরে খাচ্ছে।)

আবার চর্যায় মোট ৬টি প্রবাদ বাক্য পাওয়া যায়। যেমন_ “ আপনা মাংসে হরিণা বৈরি”

চর্যাপদে কবিগণঃ

আবিষ্কৃত পুঁথিটিতে ৫১টি চর্যায় মোট ২৪ জন সিদ্ধাচার্যের নাম পাওয়া যায়।

এঁরা হলেন: লুই, কুক্কুরী, বিরুআ, গুণ্ডরী, চাটিল, ভুসুকু, কাহ্ন, কাম্বলাম্বর, ডোম্বী, শান্তি, মহিত্তা, বীণা, সরহ, শবর, আজদেব, ঢেণ্ঢণ, দারিক, ভাদে, তাড়ক, কঙ্কণ, জঅনন্দি, ধাম, তান্তী পা, লাড়ীডোম্বী। চর্যার পদকর্তাগণের নামের শেষে সন্মানসূচক পা যোগ করা হয়

যেমনঃ লুইপা,শবরপা ইত্যাদি।

চর্যাপদের আদি কবি বা সিদ্ধাচার্য হিসেবে ধরা হয় লুইপাকে।কিন্তু ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন শবরপা ছিলেন লুইপার গুরু তাই চর্যার প্রাচীন কবি শবরপা-ই হবেন। এই পুঁথিতে লাড়ী ডোম্বীপার কোন পদ পাওয়া যায় নি তাই তাকে চর্যাপদের নামে মাত্র কবি বলা হয়।

একমাত্র অনুমিত মহিলা কবি বলা হয় কুক্কুরীপাকে।

চর্যাপদের বিভিন্ন নামকরণ :

 

হরপ্রসাদ শাস্ত্রী

চর্য্যাচর্য্যবিনিশ্চয়

 

প্রবোধচন্দ্র বাগচী

চর্য্যাগীতিকোষ

 

সুকুমার সেন

চর্য্যাগীতিপদাবলী

 

অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়

চর্য্যাগীতিকা

 

নীলরতন সেন

চর্য্যাগীতিকোষ

 

শশীভূষণ দাশগুপ্ত

চর্য্যাগীতি

 

চর্যাপদে কবির সংখ্যাঃ

চর্যাপদে মোট ২৪ জন কবি পাওয়া যায়
১ জন কবির পদ পাওয়া যায়নি তার নাম – তন্ত্রীপা / তেনতরীপা
সেই হিসেবে পদ প্রাপ্ত কবির মোট সংখ্যা ২৩ জন।

উল্লেখযোগ্য কবিঃ
১. লুইপা ২. কাহ্নপা ৩. ভুসুকপা ৪. সরহপা ৫. শবরীপা ৬. লাড়ীডোম্বীপা ৭. বিরূপা
৮. কুম্বলাম্বরপা ৯. ঢেন্ডনপা ১০. কুক্কুরীপা ১১. কঙ্ককপা

কবিদের নাম শেষে পা দেওয়ার কারণঃ
পদ > পাদ > পা
পাদ > পদ > পা
পদ রচনা করেন যিনি তাদেরকে পদকর্তা বলা হত যার অর্থ সিদ্ধাচার্য / সাধক [এরা বৌদ্ধ সহজিয়া ধর্মের সাধক ছিলেন]

২ টি কারণে নাম শেষে পা দেওয়া হতঃ
১. পদ রচনা করতেন
২. সম্মান / গৌরবসূচক কারনে

লুইপাঃ
১. চর্যাপদের আদিকবি
২. রচিত পদের সংখ্যা ২ টি

কাহ্নপাঃ
১. কাহ্নপার রচিত মোট পদের সংখ্যা ১৩ টি –তিনি সবচেয়ে বেশী পদ রচয়ীতা
২. উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে ১২ টি
৩. তার রচিত ২৪ নং পদটি পাওয়া যায়নি

ভুসুকপাঃ
১. পদসংখ্যার রচনার দিক দিয়ে ২য়
২. রচিত পদের সংখ্যা ৮টি
৩. তিনি নিজেকে বাঙ্গালী কবি বলে দাবী করেছেন
৪. তার বিখ্যাত কাব্যঃ অপনা মাংসে হরিণা বৈরী অর্থ – হরিণ নিজেই নিজের শত্রু

সরহপাঃ
১. রচিত পদের সংখ্যা ৪ টি

শবরীপাঃ
১. রচিত পদের সংখ্যা ২ টি
২. গবেষকগণ তাকে বাঙ্গালী কবি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন
৩. বাংলার অঞ্চলে ভাগীরথী নদীর তীরে বসবাস করতেন বলে ধারণা করা হয়। যদি তিনি ভাগীরথী নদীর তীরে বসবাস না করতেন তাহলে বাঙ্গালী কবি হবেন না।

কুক্কুরীপাঃ
১. রচিত পদের সংখ্যা ৩ টি। (প্রাপ্ত পদের সংখ্যা-০২ টি)
২. তার রচনায় মেয়েলী ভাব থাকার কারণে গবেষকগণ তাকে মহিলা কবি হিসেবে সনাক্ত করেন।

তন্ত্রীপাঃ
১. উনার রচিত পদটি পাওয়া যায় নি।
২. উনার রচিত পদটি ২৫ নং পদ।

ঢেন্ডনপাঃ
চর্যাপদে আছে যে বেদে দলের কথা, ঘাঁটের কথা, মাদল বাজিয়ে বিয়ে করতে যাবার উৎসব, নব বধুর নাকের নথ ও কানের দুল চোরের চুরি করার কথা সর্বোপরি ভাতের অভাবের কথা
ঢেন্ডনপা রচিত পদে তৎকালীন সমাজপদ রচিত হয়েছে। তিনি পেশায় তাঁতি
টালত মোর ঘর নাই পড়বেশী
হাঁড়িতে ভাত নাই নিতি আবেশী

[আবেশী কথাটার ২টি অর্থ রয়েছে
ক্ল্যাসিক অর্থে – উপোস এবং রোমান্টিক অর্থে – বন্ধু]

পদকর্তাদের পদ সংখ্যা :

পদ কর্তা

পদ সংখ্যা

কাহ্নপা

১৩

ভুসুকপাদ

সরহপাদ

কুক্কুরীপাদ

লুইপাদ

শবরপাদ

শান্তিপাদ

চাটিলপাদ

ডোম্বীপাদ

গুরুত্বপূর্ণ তথ্যসমূহ

ó হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মহাশয় আবিষ্কৃত পুঁথি টি তালপাতার উপর রচিত।

ó চর্যার কবিরা ছিলেন বৌদ্ধ সহজিয়া সাধক বা সিদ্ধাচার্য।

ó হরপ্রসাদ শাস্ত্রী মহাশয় মোট সাড়ে ৪৬ টি পদ আবিষ্কার করেন। কিন্তু মূল গ্রন্থে পদের সংখ্যা ৫০ টি (মতান্তরে ৫১ টি)।

ó ২৪, ২৫ ও ৪৮ নং পদ সম্পূর্ণরূপে লুপ্ত এবং ২৩ নং পদের অর্ধেক অংশ ৬ টি চরণ পাওয়া যায়, শেষাংশ নষ্ট হয়ে যায়।

ó ২৪, ২৫ ও ৪৮ নং পদ সম্পূর্ণরূপে লুপ্ত হলেও চর্যাপদের তিব্বতী অনুবাদে এই ৩ টি পদ পাওয়া যায়। এই তিনি টি পদের পদকর্তা যথাক্রমে – কাহ্নপাদ, তান্তীপাদ এবং কুক্করীপাদ।

ó নষ্ট হয়ে যাওয়া পৃষ্ঠাগুলি বাদ দিলে পুঁথির মোট পৃষ্ঠা সংখ্যা ৬৪ টি। শেষ পাতার পৃষ্ঠা সংখ্যা ৬৯।

ó ৩৫, ৩৬, ৩৭, ৩৯ আনং ৬৬ সংখ্যক পুঁথির মোট ৫ টি পাতা নষ্ট হয়ে যায়।

ó পুঁথিটি শুরু হয়েছে “নমঃ শ্রীবজ্রযোগিনৈ” শব্দ দিয়ে।

ó মোট ২৪ জন পদকর্তার নাম পাওয়া যায় (মতান্তরে ২৩ জন)। কোন কোন সমালোচকের মতে মোট ২২ জন কবির পদ ছিল।

ó চর্যাপদ –এর প্রথম পদ টি রচনা করেন – লুইপাদ। চর্যাপদ –এর টীকাকার মুনিদত্ত লুইপাদ কে আদি সিদ্ধাচার্য বলেছেন।

ó চর্যাপদে ব্যবহৃত রাগের সংখ্যা ২২ টি।

ó 'পটমঞ্জরী রাগে' সর্বাধিক (১১ টি) পদ রচিত হয়েছে।

ó চর্যাপদ –এর শেষ পদটিতে রামক্রী রাগের উল্লেখ রয়েছে।

ó চর্যাপদে পাদাকুলক ছন্দের সবচেয়ে (৩৬ বার) বেশি ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।

ó চর্যাপদের ৫ টি পদের ভণিতায় কোন কবির নাম পাওয়া যায়নি।

ó চর্যার কবিতাগুলি সাধারণত ১০ লাইনে রচিত। কিন্তু ১ টি ৮ লাইন, ২ টি ১২ লাইন আনং ১ টি ১৪ লাইনের পদ রয়েছে।

ó চর্যাপদে টীকাসহ মোট শব্দ সংখ্যা ১৬৬০ টি।

ó চর্যাপদের টীকায় মুনিদত্ত লুইপাদ কে 'জ্ঞানানন্দসুন্দর' আখ্যা দিয়েছেন।

ó চর্যাপদের কবি ভুসুকুপাদ কে 'চিত্রধর্মী কবি' বলা হয়।

ó চর্যাগীতির ফটোকপি প্রকাশ করেন নীলরতন সেন।

ó চর্যাগীতির তিব্বতী টীকাকার  কীর্তিচন্দ্র। তিব্বতী অনুবাদ টি আবিষ্কার করেন প্রবোধচন্দ্র বাগচী মহাশয়।

ó চর্যাগীতির সংস্কৃত টীকাকার  মুনিদত্ত।

চর্যাপদের বিভিন্ন পদে যে বিষয় গুলির উল্লেখ রয়েছে :

ó  নং পদ  পিড়ির উল্লেখ রয়েছে।

ó  নং পদ - চোরবৃত্তি, তেঁতুলের উল্লেখ পাওয়া যায়।

ó  নং পদ  ঘটী, শুণ্ডিনীদের পানীয় বিক্রির কথা উল্লিখিত হয়েছে।

ó  নং পদ  হাতির কথা রয়েছে।

ó ১০ নং পদ - ডোমেদের নগরের বাইরে থাকার কথা, ডোমিনীদের চাঙারি তৈরী, নটদের পেটিকা বহনের কথা উল্লিখিত হয়েছে।

ó ১১ নং পদ - কাপালি যোগী উল্লেখ পাওয়া যায়।

ó ১২ নং পদ - দাবা খেলার বর্ণনা রয়েছে।

ó ১৪ নং পদ - গঙ্গা, যমুনা, নৌকা পারাপারের সময় কড়ি প্রদানের কথা এবং রথের উল্লেখ 

রয়েছ।

ó ১৬ নং পদ - গঙ্গা, যমুনার উল্লেখ পাওয়া যায়।

ó ১৭ নং পদ - নাটক, গান, বাজনা এবং হাতির কথা বর্ণিত হয়েছে।

ó ১৮ নং পদ - কুলীনদের কথা, ডোমিনীদের গণিকাবৃত্তির উল্লেখ পাওয়া যায়।

ó ২৩ নং পদ - ব্যাধের শিকারের উল্লেখ রয়েছে।

ó ২৬ নং পদ - তুলো ধুনার কথা উল্লিখিত হয়েছে।

ó ২৮ নং পদ - তাম্বুল, গুঞ্জার অলংকার, উঁচু পর্বত।

ó ২৯ নং পদ - আগম, বেদ পাঠ ঘণ্টমালার উল্লেখ রয়েছে।

ó ৩৩ নং পদ  হাঁড়ি, ভাত, দুধ।

ó ৩৮ নং পদ - নৌবাহিনীর কথা পাওয়া যায়।

ó ৪৯ নং পদ - পদ্মাকে খাল বলা হয়েছে।

ó ৫০ নং পদ - বাড়ি, কৃষি সভ্যতা।

ó চর্যাপদের রূপতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য:

ó ১। কর্তৃকারক প্রায় বিভক্তি হীন।

ó ২। করণ কারকে ‘এন’ জাত ‘এঁ’ বিভক্তি পাওয়া যায়।

ó ৩। অধিকরণ কারকে ‘এ’ বিভক্তি ছাড়া ‘ই’, ‘ত’, ‘হি’ বিভক্তি লক্ষণীয়।

ó ৪। গৌনকর্ম ও সম্প্রদানে ‘ক’ এবং ‘রে’ বিভক্তি লক্ষ্য করা যায়।

ó ৫। অনেক ক্ষেত্রে ‘শ’ এর স্থানে ‘স’ ব্যবহৃত হয়েছে।

ó চর্যাপদের ধ্বনিতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য:

ó ১। শব্দের শেষে স্বরধ্বনি লুপ্ত হয়ে যায়নি।

ó ২। দুই বর্ণের মধ্যবর্তী একক মহাপ্রাণ ধ্বনি অনেক সময় ‘হ’ ধ্বনি তে রুপান্তরিত হয়েছে।

ó ৩। পাশাপাশি অবস্থিত স্বরধ্বনির মাঝে প্রায়ই শ্রুতিধ্বনির আগমন ঘটেছে।

চর্যাপদের ভাষাঃ
চর্যাপদের ভাষা বাংলা কি-না সে বিষয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল পরবর্তীতে যার অবসান হয়েছে। এটি বাংলা ভাষার একটি গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন। চর্যাপদের রচয়িতা বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যগণ সংস্কৃতে পারদর্শী হলেও তাঁরা তৎকালীন অপরিণত বাংলাতেই পদগুলি রচনা করেছিলেন। চর্যাপদের ভাষা বাংলা ভাষার অদ্যাবধি আবিষ্কৃত আদিতম রূপ। ডক্টর সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় তাঁর “Origin and Development of the Bengali language” (ODBL) _ গ্রন্থে বলেছেন__ “বাংলা নিশ্চয়ই,বাংলার মূর্তি অবহটঠের সদ্যোনির্মোক মুক্ত রূপ”।

তবে ডঃ মুঃ শহীদুল্লাহ চর্যার ভাষাকে প্রাচীন বাংলা কিংবা প্রাচীন বঙ্গকামরুপী ভাষা বলাই সঙ্গত মনে করেন। ম্যাক্সমুলারের মতে “চর্যাপদের ভাষা হলো প্রচ্ছন্ন ভাষা”। নির্দিষ্ট কোন রুপ নাই বিধায় অনেকে চর্যার ভাষাকে সান্ধ্যাভাষা বা আলো আধারির ভাষা বলেছেন।

চর্যাপদ শুধু প্রাচীন বাংলা সাহিত্যেরই নিদর্শন নয়, প্রাচীন বাংলা গানেরও নিদর্শন। প্রতিটি পদের শুরুতে রাগ-তাল ও প্রতি জোড়-পদে ‘ধ্রুব’ শব্দের উল্লেখ থাকায় নিশ্চিত প্রমাণিত হয় যে, এগুলি তখন গাওয়া হতো। এ ছাড়া পদগুলি থেকে তৎকালীন বাঙালি জীবনের আচার-আচরণ ও সমাজের বাস্তবঘন পরিচয়ও পাওয়া যায়। যেমন তখনকার মানুষ হরিণ শিকার, নৌকা চালনা, চেঙারি তৈরি, শুঁড়ির কাজ ইত্যাদি করত। কাড়া-নাকাড়া ও ঢাক-ঢোল বাজিয়ে বর-কনেকে বিয়ের আসরে নিয়ে যাওয়া হতো। সমাজে যৌতুক প্রথা প্রচলিত ছিল। গরু ছিল গৃহপালিত পশু; হাতিরও উল্লেখ আছে। মেয়েরা পরিধানে ময়ূরপুচ্ছ, গলায় গুঞ্জার মালা এবং কর্ণে কুন্ডল পরত। টাঙ্গি, কুঠার, নখলি বা খন্তা ছিল উল্লেখযোগ্য অস্ত্র। তবে সমকালীন সমাজের এসব চিত্র অঙ্কন করলেও চর্যাকারেরা প্রধানত ছিলেন বৈরাগ্যপন্থি, জগৎমুখী নন।

ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে,

ó প্রাচীনতম চর্যাকার শবরপা এবং আধুনিকতম চর্যাকার সরহ বা ভুসুকুপা।

ó কাহ্নপা সর্বাধিক ১৩টি পদ রচনা করেন

ó দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদ লেখেন-ভুসুকুপা: ৮টি।

ó শবরপাকে চর্যাপদের বাঙালি কবি মনে করা হয়

ó চর্যাপদ মাত্রাবিত্ত ছন্দে রচিত

ó চর্যাপদ গ্রন্থে মোট কয়টি পদ পাওয়া গেছে-সাড়ে ছেচল্লিশটি (একটি পদের ছেঁড়া বা খন্ডিত অংশসহ)।

ó চর্যার পদগুলো সন্ধ্যা বা সান্ধ্য ভাষায় রচিত।

ó সন্ধ্যা বা সান্ধ্য ভাষা-যে ভাষা সুনির্দিষ্ট রূপ পায় নি, যে ভাষার অর্থও একাধিক অর্থাৎ আলো-আঁধারের মত, সে ভাষাকে পন্ডিতগণ সন্ধ্যা বা সান্ধ্যভাষা বলেছেন।

ó চর্যাপদ গ্রন্থে অন্তর্ভুক্ত প্রথম পদটি লেখা-লুইপার।

ó চর্যাপদের আবিষ্কারক হরপ্রসাদ শাস্ত্রী।

ó নেপালের রয়েল লাইব্রেরি থেকে, ১৯০৭সালে চর্যাপদ আবিষ্কার করা হয়।

১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে (১৩২৩ বঙ্গাব্দ) কলকাতার বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষৎ থেকে চর্যাপদ আধুনিক লিপিতে প্রকাশিত হয়। এর সম্পাদনা করেন মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী।

মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে ৬৫০খ্রিস্টাব্দ থেকে, সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের মতে ৯৫০ থেকে ১২০০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে পদগুলো রচিত। সুকুমার সেন সহ বাংলা সাহিত্যের প্রায় সব পন্ডিতই সুনীতিকুমারকে সমর্থন করেন।

চর্যাপদের নাম নিয়ে প্রস্তাবগুলো -কারো মতে গ্রন্থটির নাম, ‘আশ্চর্যচর্যাচয়’, সুকুমার সেনের মতে ‘চর্যাশ্চর্যবিনিশ্চয়, আধুনিক পন্ডিতদের মতে এর নাম ‘চর্যাগীতিকোষ’ আর হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর মতে ‘চর্য্যার্চয্যবিনিশ্চয়’।

তবে ‘চর্যাপদ’ সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নাম।

চর্যার কবিদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা প্রাচীন বলে মনে করা হয়-শবরপা (৬৮০ থেকে ৭৬০ খ্রিস্টাব্দ)।

চর্যাপদের সর্বাধিক পদরচয়িতা -কাহ্নপা। চর্যাপদে যে পদগুলো পাওয়া যায় নি তার মধ্যে কাহ্নপার রচনা বলে মনে করা হয়-২৪ নং পদটি।

চর্যাপদে কাহ্নপা আর কি কি নাম পাওয়া যায়-কাহ্নু, কাহ্নি, কাহ্নিল, কৃষ্ণচর্য, কৃষ্ণবজ্রপাদ।

অনেকের মতে কুক্কুরীপা নারী ছিলেন।

কুক্কুরীপা রচিত অতিপরিচিত দুটি পংক্তি -দিবসহি বহূড়ী কাউহি ডর ভাই।রাতি ভইলে কামরু জাই। (পদ:২) (অর্থাৎ দিনে বউটি কাকের ভয়ে ভীত হয় কিন্তু রাত হলেইসে কামরূপ যায়।)

লুইপা ছিলেন-প্রবীণ বৌদ্ধসিদ্ধাচার্য ও চর্যাপদেরকবি।
তিববতী ঐতিহাসিক লামা তারনাথের মতে লুইপা পশ্চিমবঙ্গের গঙ্গার ধারে বাস করতেন। হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর মতে লুইপা রাঢ়অঞ্চলের লোক।

চর্যাপদের প্রথম পদটি রচনা লুইপার।

কাআ তরুবর পাঞ্চ বি ডাল।চঞ্চল চীএ পৈঠা কাল\ (পদ: ১) ( অর্থাৎ দেহগাছের মত, এর পাঁচটি ডাল। চঞ্চল মনে কালপ্রবেশ করে।)

লুইপা রচিত সংস্কৃতগ্রন্থের নাম পাওয়া যায়, – ৫টি। অভিসময় বিভঙ্গ, বজ্রস্বত্ব সাধন, বুদ্ধোদয়, ভগবদাভসার, তত্ত্ব সভাব।

শবরপা -তার জীবনকাল ৬৮০ থেকে ৭৬০খ্রিস্টাব্দের মধ্যে। সেই সূত্রে শবরপা চর্যারকবিদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা প্রাচীন। মুহুম্মদ শহীদুল্লাহর মতে তিনি ‘বাংলা দেশে’র লোক।

শবরপা গুরু ছিলেন-লুইপার।

গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্নোত্তর


প্রশ্নঃ বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন কি?

উঃ চর্যাপদ

প্রশ্ন: চর্যাপদ’ শব্দটির অর্থ কি?
উঃ জীবন যাপনের পদ্ধতিকে চর্যা বলে। চর্যা থেকে বর্তমানে ‘চর্চা” শব্দটির উৎপত্তি। পদ’ অর্থ চরণ বা পা। ‘চর্যাপদ’ শব্দটির অর্থ দাঁড়ায় জীবন যাপনের পদ্ধতি বা আচরণ যে কবিতায় বা চরণে লিখিত থাকে অর্থাৎ ‘চর্যাপদ-এর মূল অর্থ হলো কোনটি আচরণীয়, কোনটি আচরণীয় নয়।

প্রশ্ন: চর্যাপদের প্রকৃত নাম কী?
উঃ চর্যাচর্যবিনিশ্চয়।

প্রশ্ন: চর্যাপদকে সংক্ষেপে কী বলা হয়?
উঃ বৌদ্ধগান ও দোহা’ বা ‘চর্যাপদ।

প্রশ্ন: “চর্যাপদ মূলত কী ধরনের গ্রন্থ?
উঃ কবিতা সংকলন বা গানের সংকলন।

প্রশ্নঃ চর্যাপদের রচয়িতা কারা?
উঃ বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যগণ/বৌদ্ধ সহজিয়াগণ।

প্রশ্নঃ চর্যাপদ মূলত কোন ধর্ম নিয়ে রচিত?
উঃ বৌদ্ধ ধর্ম।

প্রশ্ন: কোন আমলে চযাপদ রচিত হয়েছে?
উঃ পাল রাজাদের আমলে।

প্রশ্ন: চর্যাপদ রচনায় কারা পৃষ্টপোষকতা করেছেন?
উঃ পাল রাজারা।

প্রশ্ন: চর্যাপদ কোন প্রতিষ্ঠানের পৃষ্ঠপোষকতায় পুনরুদ্ধার করা হয়েছে?
উঃ বঙ্গীয় সাহিত্যে পরিষদ।

প্রশ্ন: চর্যাপদের আবিষ্কারক কে?
উঃ মহামহো পাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী।

প্রশ্ন: কোন স্থান থেকে চর্যাপদ আবিষ্কার করা হয়?
উঃ নেপালের রাজ দরবারের গ্রন্থশালা/নেপালের রয়েল লাইব্রেরি।

প্রশ্ন: চর্যাপদ কত সালে আবিষ্কৃত হয়?
উঃ ১৯০৭ সালে (১৩১৪ বঙ্গাব্দে)।

প্রশ্ন: চর্যাপদ কত সালে প্রকাশিত হয়?
উঃ ১৯১৬ সালে (১৩২৩ বঙ্গাব্দে) বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ থেকে হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর সম্পাদনায় ‘হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গালা ভাষায় বৌদ্ধগান ও দোহা’ নামে।

প্রশ্ন: চর্যাপদের মোট পদ সংখ্যা কত?
উঃ ৫১ টি।

প্রশ্নঃ চর্যাপদের আবিষ্কৃত পদ সংখ্যা কত?
উঃ সাড়ে ছেচল্লিশটি।

প্রশ্ন: চর্যাপদ কোন ছন্দে রচিত
উঃ মাত্রাবৃত্ত।

প্রশ্ন: চর্যাপদের ভাষা কী?
উঃ সন্ধ্যা বা সান্ধ্য ভাষা।

প্রশ্ন: কোন সাহিত্য কর্মে সান্ধ্যভাষার প্রয়োগ আছে?
উঃ চর্যাপদ। (‘ব্রজবুলি ভাষার প্রয়োগ ঘটেছে বৈষ্ণব পদাবলি সাহিত্যে।)

প্রশ্ন: চর্যাপদের কবির সংখ্যা/পদকর্তা কতজন?
উঃ ২৩ জন। (চর্যাপদের খণ্ডিত আকারে প্রাপ্ত পদটিও ২৩ নং)

প্রশ্ন: চর্যাপদের আদি কবি কে?
উঃ লুইপা (তিনি চর্যাপদের প্রথম পদটি রচনা করেছেন বলে তাঁকে আদি কবি বলা হয়।)

প্রশ্ন: চর্যাপদের সর্বাধিক পদ রচয়িতা কে?

উঃ কাহপা (১৩টি)।


ó চর্যাপদের অন্য নাম – চর্যাচর্যবিনিশ্চয়, আশ্চর্যচর্যাচয় (মুনিদত্তের মতানুসারে), চর্যাশ্চর্যবিনিশ্চয়, চর্যাগীতিকোষ, চর্যাগীতিকোষবৃত্তি।

ó চর্যাপদ রচিত হয় পাল আমলে।

ó চর্যাপদ পয়ার ও ত্রিপদী ছন্দে রচিত। তবে আধুনিক ছন্দের বিচারে চর্যাপদ মাত্রাবৃত্ত ছন্দে রচিত।

ó চর্যাপদের টীকাকার মুনিদত্ত। তবে তিনি ১১ নং পদের ব্যাখ্যা দেননি।

ó চর্যাপদের ভাষা বাংলা প্রমাণ করেন – ড.সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়।

ó চর্যাপদের প্রথম পদ লেখক লুইপাকে বাংলা সাহিত্যের আদিকবি বলা হয়। তিনি প্রথম বাঙালি পদকর্তা।

ó আধুনিক পদকর্তা – সরহপা অথবা ভুসুকপা। ৪৯ নং পদে ভুসুকপা নিজেকে বাঙালি হিসেবে পরিচয় দিয়েছে।

ó শবরপাকে চর্যাপদের শ্রেষ্ঠ কবি বলা হয়। তিনি লুইপার গুরু। গবেষকগণ তাকে বাঙ্গালী কবি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। চর্যার কবিদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা প্রাচীন বলে মনে করা হয় শবরপাকে (৬৮০ থেকে ৭৬০ খ্রিস্টাব্দ)।

ó চর্যাপদের প্রথম বাঙালি কবি – মীননাথ/মাৎসেন্দ্রনাথ। তাঁর কোন পূর্ণাঙ্গ পদ পাওয়া যায়নি।

ó চর্যাপদে ৫টি ভাষার মিশ্রণ রয়েছে – বাংলা, হিন্দি, মৈথিলি, অসমিয়া, উড়িয়া।

ó চর্যার এক একটি পদ সাধারণত ১০টি লাইন সহযোগে গঠিত। তবে ২১নং পদে লাইনসংখ্যা ৮টি এবং ৪৩ নং পদে লাইন সংখ্যা ১২টি।

ó চর্যাপদের ইংরেজি অনুবাদ ‘মিস্টিক পোয়েট্রি অব বাংলাদেশ’। ২০১৭ সালে হাসনা জসীমউদ্দীন মওদুদ (কবি জসীমউদ্দীনের কন্যা) তালপাতার মূল পাণ্ডুলিপি থেকে চর্যার ইংরেজি অনুবাদটি করেন।

চর্যাপদ থেকে লিখিত পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি প্রশ্নোত্তর:

১) চর্যাপদ ভারতের বাইরে বা নেপালে পাওয়া যাবার কারণ কী?

উত্তর - চর্যাপদ ভারতের বাইরে বা নেপালে পাওয়া যাবার কারণগুলি হল ---

(ক) ইতিহাস থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, বাংলার পাল বংশের রাজারা ছিলেন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। তাদের আমলে চর্যাগীতির বিকাশ ঘটেছিল। পাল বংশের পরপরই বাংলাদেশে পৌরাণিক হিন্দুধর্ম ও ব্রাহ্মণ্যসংস্কার রাজধর্ম হিসেবে গৃহীত হয়। অপরদিকে, বাংলার সেন রাজারা ছিলেন হিন্দু ধর্মাবলম্বী। তাই ধর্মীয় সংকীর্ণতায় নিমজ্জিত সেন সময়কালের কতিপয় হিন্দু ব্রাহ্মণ বৌদ্ধদের ওপর নিপীড়ন চালায়। সেন রাজাদের প্রতাপের কারণেই বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যদের এ দেশ থেকে বিতাড়িত হয়ে অর্থাৎ বাংলাদেশের বাইরে গিয়ে অস্তিত্ব রক্ষা করতে হয়েছিল।

(খ) আবার, ১২০৪ সালে ইখতিয়ার উদ্দিন মুহম্মদ বিন বখতিয়ার খলজির বাংলায় আগমন ঘটলে মুসলিম তুর্কিদের আক্রমণের ভয়ে বৌদ্ধ পণ্ডিতগণ প্রাণের ভয়ে পুথিপত্র নিয়ে নেপাল, ভুটান ও তিব্বতে পালিয়ে যায়। এ প্রসঙ্গে হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর জীবনীকার সত্যজিৎ চৌধুরী লিখেছেন, --- "তুর্কি আক্রমণের সময়ে পুথিপত্র নিয়ে বাংলার পণ্ডিত মানুষেরা নেপালে, তিব্বতে চলে গিয়েছিলেন।" এ মতই সর্বাধিক মান্য।

(গ) চর্যা গবেষক তারাপদ মুখোপাধ্যায় মনে করেন যে, এক সময়ে নেপালে বসবাসকারী বাঙালিরা বাংলা লিপিতে পুথি লিখেছেন এবং তাই তিনি বলেছেন, - “নেপালে বাংলা অক্ষরে বাঙালি লিপিকরের লেখা পুথির অস্তিত্ব আশ্চর্যের ব্যাপার নয়”।

২) 'চর্যা' শব্দের অর্থ কী? এ প্রসঙ্গে যথোপযুক্ত তথ্য দিন।

উত্তর - 'চর্যা' শব্দের মূলত দু'টি অর্থ প্রাধান্য পায়। সেগুলি হল ---

(ক) 'চর্যা' শব্দের সাধারণ অর্থ আচার আচরণ। বিশেষ অর্থ -- মুনি ঋষি যোগী তপস্বীদের সুনির্দিষ্ট আচার আচরণ।

তাঁদের থাকা, খাওয়া, পরা, কাজকর্ম, ধর্মাচরণ ইত্যাদি -- যেগুলি তাঁর শিষ্য পরম্পরায় মেনে চলেন। তাই চর্যা মানে -- দুষ্কর ব্রতাচরণ।

(খ) চর্যা মানে একশ্রেণির অধ্যাত্ম গীতি -- যাতে সাধু সন্ন্যাসীদের ব্রতাচরণ ও ধর্মকর্ম প্রকাশ পায়। এতে ২ বা ৩ জোড়া চরণ থাকে।

৩) চর্যার ভাষার প্রধান ভাষাতাত্ত্বিক পটভূমি যে পশ্চিমবঙ্গ, তার কয়েকটি প্রমাণ দিন।

উত্তর - তার কয়েকটি প্রমাণ নিম্নে দেওয়া হল ---

(ক) গৌণ কর্ম সম্প্রদানের বিভক্তির পরিবর্তে 'ক' বিভক্তির আপেক্ষিক প্রয়োগাধিক্য।

(খ) সাথে অনুসর্গের পরিবর্তে 'সন', 'সঙ্গ'-এর ব্যবহার।

(গ) ৩৯, ৪৯ নং পদ দুটি চর্যায় রূপকের ছলে পূর্ববঙ্গবাসীদের (বঙ্গাল) প্রতি অবজ্ঞা অনুকম্পা মিশ্রিত মনোভাব প্রকাশ।

৪) চর্যার কেমন পুথি মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী ছেপেছিলেন?

উত্তর - মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী চর্যার যে পুথিটি ছেপেছিলেন, সেটি সম্পূর্ণ পুথি নয় -- খণ্ডিত পুথি। প্রাপ্ত পুথিটিতে মোট পাতার নম্বর আছে ১ থেকে ৬৯। তন্মধ্যে হরপ্রসাদ পাননি ৩৫, ৩৬, ৩৭, ৩৮ এবং ৬৬ নং, মোট ৫টি পাতা। এছাড়া, ৬৯ পাতার পর, পুথিতে আর কত পাতা ছিল, তাও জানা যায়নি। আবার এই ৫টি পাতা হারিয়ে যাওয়ার জন্যেই, এই পাতাগুলিতে লেখা ২৩ নং গানের অর্ধেকটি এবং ২৪, ২৫ ও ৪৮ নং গান অর্থাৎ মোট ৩.৫টি গান বা পদ তিনি পাননি। তাই হরপ্রসাদের খণ্ডিত পুথিতে আছে মোট ৬৪টি পাতা, মোট ৪৬.৫টি গান বা পদ। আর আছে প্রতিটি গানের নীচে সংস্কৃত টীকা। অর্থাৎ হরপ্রসাদ শাস্ত্রী এই ৬৪টি পাতা সম্বলিত এই ৪৬.৫টি গান বা পদ (টীকা সমেত) যা ছেপেছিলেন --- তারই নাম 'চর্য্যাচর্য্যবিনিশ্চয়'।

৫) চর্যাপদের ভাষা যে বাংলা, তার কয়েকটি উল্লেখযোগ্য প্রমাণ দিন।

উত্তর - চর্যাপদের ভাষা যে বাংলা, তার কয়েকটি উল্লেখযোগ্য প্রমাণ নিম্নে দেওয়া হল ---

(ক) চর্যার ভাষার অধিকাংশ শব্দরূপ বাংলার নিজস্ব শব্দরূপ। যেমন -- 'তরঙ্গেতে হরিণার খুর ণ দীসঅ', 'ঝাণে দিঠা', 'কুম্ভীরে খাঅ'।

(খ) চর্যায় ব্যবহৃত অধিকাংশ প্রবাদই বাংলার নিজস্ব প্রবাদ। যেমন -- 'অপণা মাংসে হরিণা বৈরী', 'জো ষো চৌর সোই সাধী', 'হাঁড়ীত ভাত নাহি নিতি আবেশী'। পরবর্তীকালের বাংলা কাব্যে ও জীবনে এগুলি বহু ব্যবহৃত হয়েছে।

(গ) চর্যার যৌগিক ক্রিয়াগুলি বাংলার খাঁটি যৌগিক ক্রিয়া। যেমন -- 'টুটি গেলি' (পদ-৩৭), 'গুণিআ লেহুঁ' (পদ-১২), 'পুচ্ছিন্ন জাণ' (পদ-১), 'ধরণ ণ জাই' (পদ-২)।

(ঘ) চর্যায় নঞর্থক বাক্যাংশ ব্যবহারেও বাংলার নিজস্ব ব্যবহার দেখা যায়। যেমন -- 'ণ জাই' (পদ-২), 'ণ ভুলই' (পদ-১৫)।

৬) 'সন্ধ্যা'(সন্ধা) ভাষা কী? চর্যাগীতি থেকে এই ভাষার একটি উদাহরণ দিন।

উত্তর - চর্যাপদের ভাষাকে কেউ কেউ 'সন্ধ্যা' (সন্ধা) ভাষা বলেছেন। এই ভাষা হল ---

(ক) গূঢ়ার্থ প্রতিপাদক একরকমের সাংকেতিক বচন। যার সাধারণভাবে একরকমের অর্থ হয় কিন্ত তার ভেতরের অর্থ হয় অন্যরকম।

(খ) এক একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর মধ্যেই এই ভাষা চলতে থাকে। সেই গোষ্ঠীর লোকেরাই তার অর্থ বোঝে, অন্যেরা বোঝে না।

(গ) সাধারণত গোপনীয়তা রক্ষার জন্যই এই ভাষা ব্যবহার হয়। যেমন -- "সোনে ভরিতী করুণা নাবী। রূপা থোই নাহিক ঠাবী।।" (পদ-৮)

৭) চর্যাপদে কবিদের নামের সঙ্গে 'পাদ' বা 'পা' শব্দের যোগ থাকে কেন? 

উত্তর - 'পাদ' শব্দের অর্থ -- পূজনীয়, পূজ্যবাচী, গৌরব বাচক, যাঁর চরণ স্পর্শ করে শ্রদ্ধা জানানো যায়। 'পাদ' মানে ধর্মগুরু। সমকালে চর্যাকবিরা শিষ্য ভক্ত মণ্ডলীর কাছে পূজনীয় আচার্য বা গুরু হিসেবে মর্যাদা পেয়ে ছিলেন। তাই তাঁদের ভক্ত শিষ্যরা তাঁদের নামের সঙ্গে 'পাদ' বা 'পা' শব্দটি যোগ করে দিতেন। তদনুসারেই মুনিদত্ত টীকা রচনাকালে কবিদের নামের শেষে 'পাদ' বা 'পা' শব্দ যোগ করেছেন।

৮) চর্যাপদে ব্যক্তিগতভাবে কাহ্নপাদ বা কাহ্নপা কী ছিলেন? তাঁর রচিত পদসমূহের একটি বৈশিষ্ট্য লিখুন।

উত্তর - ব্যক্তিগতভাবে কাহ্নপাদ বা কাহ্নপা ছিলেন সহজিয়া তান্ত্রিক বৌদ্ধযোগী। তিনি ধর্মশাস্ত্র ও সঙ্গীত শাস্ত্র উভয় দিকেই দক্ষ ছিলেন। তাঁর রচিত পদসমূহের একটি বৈশিষ্ট্য হল --- তাঁর পদগুলিতে নিপুণ কবিত্বশক্তি প্রকাশের পাশাপাশি তৎকালীন সমাজচিত্রও উদ্‌ঘাটিত হয়েছে।

৯) 'ভুসুক' নামকরণের কারণ কী? তাঁর রচিত পদসমূহের একটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করুন।

উত্তর - ভুসুক প্রথম দিকে অলস ছিলেন। ভুক্তি (ভু), সুপ্তি (সু), কুটিরে (কু) অবস্থান ছাড়া তিনি কিছু করতেন না বলে, তাঁকে ভুসুক বলা হয় বা তাঁর নাম ভুসুক রাখা হয়। তাঁর রচিত পদসমূহের একটি বৈশিষ্ট্য হল --- তাঁর পদগুলিতে বাঙালি জীবনের প্রতিচ্ছবি দেখা যায়।

১০) 'তাড়ক' কি কবির প্রকৃত নাম না ছদ্মনাম? উত্তরের স্বপক্ষে যুক্তি দিন।

উত্তর - পণ্ডিতদের ধারণা -- 'তাড়ক' জনৈক চর্যা কবির প্রকৃত নাম নয় -- ছদ্মনাম। এর কারণ:- 

(ক) 'তাড়ক' মানে ফাঁসুড়ে বা খুনি।

(খ) কেউ বলেছেন -- 'তাড়ক' মানে তাড়স্ক, অর্থাৎ কানের গয়না। সুতরাং, ফাঁসুড়ে বা গয়না -- এ রকম অর্থের শব্দটি (তাড়ক) কবির প্রকৃত নাম না-হওয়াই স্বাভাবিক।

শব্দকোষ-চর্যাপদ

রাহুল সাংকৃত্যায়ন

রাহুল সাংকৃত্যায়ন তথা কেদারনাথ পাণ্ডে (৯ এপ্রিল, ১৮৯৩ – ১৪ এপ্রিল, ১৯৬৩), ছিলেন ভারতের একজন স্বনামধন্য পর্যটক ভোলগা থেকে গঙ্গা তাঁর অন্যতম বিখ্যাত গ্রন্থ।

লামা তারানাথ

ষোড়শ শতকের ঐতিহাসিক। ‘কাবাভদুন দন’ নামে একটি গ্রন্থ প্রণয়ন করেন।

অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান

অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান হলেন বৌদ্ধ ভিক্ষু এবং বৌদ্ধধর্মপ্রচারক

বিখ্যাত গ্রন্থ ‘বোধিপথপ্রদীপ’।

বজ্রযান

বৌদ্ধধর্মের একটি মতবাদ।

সহজযান

সহজযান বৌদ্ধধর্মীয় একটি মতবাদ।‘বজ্র’ মানে শূন্য বা নিরাসক্তি

সিদ্ধাচার্য

বজ্রযানী ও সহজযানী গুরুদেরকে বলা হয় সিদ্ধাচার্য।    চুরাশিজন সিদ্ধাচার্য ছিলেন।

Albert Gruenwedel

একজন জার্মান, এজাধারে প্রত্নতাত্ত্বিক, ভারতবিদ্যা ও তিব্বতবিদ্যা বিশারদ, এবং মধ্য এশিয়া বিষয়ক গবেষক। দুটি বিখ্যাত গ্রন্থ Buddhist art in India (1893) and Mythology of Buddhism in Tibet and Mongolia (1900)

নীহাররঞ্জন রায়

জন্ম : ১৪ই জানুয়ারি, ১৯০৩ – মৃত্যু : ৩০শে আগস্ট, ১৯৮১

বাঙ্গালীর ইতিহাস : আদি পর্ব   বিখ্যাত গ্রন্থ।

সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়

১৯২৬ সালে প্রকাশিত হয় The Origin and Development of the Bengali Language

হরপ্রসাদ শাস্ত্রী

চর্যাপদের আবিষ্কারকের বৃতান্ত লিখুন এবং চর্যাপদের ভাষা প্রসঙ্গে আবিষ্কারকের অভিমত দিন [২৮তম বিসিএস লিখিত]

তিনি বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন চর্যাপদের আবিষ্কর্তা। তিনি সন্ধ্যাকর নন্দী রচিত রামচরিতম্ বা রামচরিতমানস পুঁথির সংগ্রাহক।

কর্মজীবন

১৯২১ থেকে ১৯২৪ পর্যন্ত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ও সংস্কৃত বিভাগের অধ্যাপক এবং বিভাগীয় প্রধান, বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সভাপতিও ছিলেন।

১৯১৬ সালে চর্যাপদের পুঁথি নিয়ে রচিত তাঁর গবেষণাপত্র হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গালা ভাষায় রচিত বৌদ্ধ গান ও দোঁহানামে প্রকাশিত হয়।

বিখ্যাত বই

বাল্মীকির জয়, মেঘদূত ব্যাখ্যা, বেণের মেয়ে (উপন্যাস), কাঞ্চনমালা (উপন্যাস), সচিত্র রামায়ণ, প্রাচীন বাংলার গৌরব ও বৌদ্ধধর্ম।

চর্যাপদের রচনাকাল

চর্যাপদের রচনাকাল নিয়ে মতভেদ আলোচনা কর।

বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন যুগের নিদর্শন চর্যাপদ। মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী কর্তৃক ১৯০৭ সালে নেপালের রাজগ্রন্থাগার থেকে আবিস্কৃত এবং ১৯১৬ সালে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ হতে “হাজার বছরের পুরাণ বাংলা ভাষায় বৌদ্ধগান ও দোহা” শিরোনামে প্রকাশিত বৌদ্ধ সহজিয়াদের গৃঢ় সাধনতন্ত্র ও দর্শনতত্ত্বের নিদর্শন হলো চর্যাপদ। চর্যাপদেী পদগুলোর রচনাকাল সম্পর্কে যথেষ্ট তথ্যের অভাবে এ সম্পর্কে সুস্পষ্ট করে কিছু বলা যায় না বলে এ ব্যাপারে নানা মুণি নানাভাবে বলেছেন। তবে চর্যাপদের রচনাকাল নিয়ে বিতর্ক হলেও সবাই চর্যাপদকে বাংলা সাহিত্যের আদি গ্রন্থ হিসেবে স্বীকার করেছেন। তাই বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস ও চর্যাপদের রচনাকাল সমান্তরাল বলে মনে করা হয়।

ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় চর্যাপদের রচনাকাল দশম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যে সীমাবদ্ধ বলে মনে করেন। তার এ মত কলকাতার সকল পণ্ডিতই বিনা দ্বিধায় মেনে নিয়েছেন। কিন্তু কলকাতার বাইরে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ এবং রাহুল সাংস্কৃত্যায়ন প্রমাণ করেছেন, লুইপাই এবং সরহপালদ এ দুজন প্রাচীন সিদ্ধাচার্য রাজা ধর্মপালের সময়ে (৭৬৯ প্রি-৮০৯ ) বর্তমান ছিলেন। তাই,মুহম্মদ শহীদুল্লাহ মনে করেন; চর্যাপদের রচনাকাল সপ্তম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যবর্তী সময়ে।

ভাষা ও রচয়িতাদের সম্ভাব্য আবির্ভাব কাল ধরে চর্যাপদের রচনাকাল নির্ধারণের চেষ্টা করা হয়েছে। ভাষার কথা আলোচনা করে সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় মত দিয়েছেন যে চর্যার ভাষায় দ্বাদশ শতকের প্রাচীন বাংলা ভাষার রূপটি বিদ্যমান। তিনি শ্রীকৃষ্ণ কীর্তনের ভাষায় আদি মধ্য বাংলার যে রূপটি প্রত্যক্ষ করেছেন। চর্যার ভাষাকে তদপেক্ষা দেড় বা দুশো বৎসরের প্রাচীন হতে পারে বলে মনে করেন। শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের ভাষাকে চতুর্দশ শতাব্দীর ধরে নিয়ে চর্যার ভাষাকে দ্বাদশ শতাব্দীর বলে মনে করেন। অবশ্য সব কটি চর্যাই দ্বাদশ শতাব্দীতে রচিত এ কথা তিনি বলেননি। প্রাচীনতম চর্যাগুলোর রচনাকাল দশম শতাব্দীর দিকে বলে তিনি স্বীকার করেন।

আরও পড়তে পারেনঃ চর্যাপদ রচনার পটভূমি বিশ্লেষণ কর।

ভ, মুহম্মদ শহীদুল্লাহ মনে করেন, বাংলা সাহিত্যের উৎপত্তিকাল সপ্তম শতকে এবং বাংলা ভাষা অন্তত আরো একশ বছর পূর্বের। তিনি মৎস্যেন্দ্রনাথকে প্রথম বাঙালি কবি বলে মনে করেন এবং প্রমাণ করেন যে, মৎস্যেন্দ্রনাথ সপ্তম শতকে জীবিত ছিলেন। কিন্তু মৎস্যেন্দ্রনাথের কোনো পদ চর্যাতে নেই। ২১নং চর্যার টীকায় মীননাথের ভণিতায় নিচের পদটি পাওয়া যায় :

কহন্তি গুরু পরমার্থের বাট
কর্মকুরঙ্গ সমাধিক পাট।
কমল বিকসিল কহিহ ণ জমরা
কমল মধু বিবি ধোকে ধোকে ণ ভমরা।”

ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ এ পুঁথির ভাষাকে প্রাচীন বাংলা বলে মনে করেন। মৎস্যেন্দ্রনাথের সময় নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। ড. সুনীতিকুমারের মতে মীননাথের শিষ্য গােরক্ষনাথ দ্বাদশ শতাব্দীর লোক। তাই মীননাথকেও দ্বাদশ শতকের লোক বলে তিনি মনে করেন। তাঁর মতে ১২০০ খ্রিস্টাব্দে রচিত মারাঠি গ্রন্থ “জ্ঞানেশ্বরী’”র লেখক জ্ঞানদেবের গুরু পরম্পরা অবলম্বনে মৎস্যেন্দ্রনাথের শিষ্য গোরক্ষনাধ তথা কাহ্নপাদের সময় দ্বাদশ শতাব্দী। গােরক্ষনাথ তথা কাহ্নপাদের আনুমানিক আবির্ভাবকাল ধরে ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় চর্যার কাল ৯৫০ থেকে ১২০০ খ্রিস্টাব্দে বলে মনে করেছেন। অধ্যাপক নলিনীনাথ দাশগুপ্ত মৎস্যেন্দ্রনাথকে দশম শতাব্দীর শেষার্ধের লোক মনে করেন। কিন্তু ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ নাথগীতিকার গোপীচাদ এবং চর্যাপদের লুইপাদের সময় আলোচনা করে দেখিয়েছেন যে, মৎস্যেন্দ্রনাথের সময় শতকের পরে হতে পারে না। তিনি বলেন, ফরাসি কবি সিলভালেভার মতে মৎস্যেন্দ্রনাথ ৬৫৭ খ্রিস্টাব্দে রাজা নরেন্দ্রদেবের রাজত্বকালে নেপালে গমন করেন। এ থেকে আমরা ৬৫০ খ্রিস্টাব্দকে বাংলা সহিত্যের আরম্ভকাল বলে ধরতে পারি।

তাঁর মতে ১২০০ খ্রিস্টাব্দে রচিত মারাধি গ্রন্থ ‘জ্ঞানেশ্বরী’র লেখক জ্ঞানদেবের গুরু পরস্পরা অবলম্বনে মৎসেন্দ্রে নাথের শিষ্য গোরক্ষণাথ তথা কাহ্ন পাদের সময় দ্বাদশ শতাব্দী। গোরক্ষণাথ তথা কাহ্ন পাদের আনুমানিক আবির্ভাবকাল ধরে ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় চর্যার কাল ৯৫০ থেকে ১২০০ খ্রিস্টাব্দে বলে মনে করেছেন।

আরও পড়তে পারেনঃ চর্যাপদের ভাষা কি বাংলা? যুক্তিসহ তোমার মতামত তুলে ধর।

এছাড়া ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ চর্যাকারদের সম্ভাব্য সময়সীমা নির্ধারণ করে দেখিয়েছেন যে চর্যার রচনাকাল সপ্তম থেকে দ্বাদশ শতকের মধ্যে পড়ে। চর্যার মোট রচয়িতার সংখ্যা ২৩ জন মতান্তরে ২৪ জন ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ চর্যার রচয়িতাদের যে আনুমানিক সময় স্থির করেছেন তা হচ্ছে-
শবর পা (৬৮০-৭৬০)
লুইপা (৭৩০-৮১০)
ডোম্বী পা (৭৯০-৮৯০)
বিরূপা, কানুপা, কুক্কুরীপা, কম্বলাম্বর, আর্যদেব, মহীধর, ধর্মপাদ, ভাদ্রপাদ প্রমুখের সময় অষ্টম শতক ভুসুকু, শান্তিপদ, দারিকপাদ ও সরহপাদের সময় একাদশ শতক। এভাবে
 চর্যাকারদের সময়সীমা নির্ধারণ করে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ দেখিয়েছেন যে, চর্যার পদগুলো দ্বাদশ শতকের আগেকার রচনা এবং কোনো এক সময় রচিত হয়নি। এগুলো দীর্ঘ চার থেকে পাঁচশ বছরব্যাপী রচিত হয়েছে।

পরিশেষে বলা যায় যে, প্রত্যক্ষ তথ্য প্রমাণের অভাবে চর্যাপদের কবিগণের আবির্ভাব কাল সঠিকভাবে নির্ধারণ করা যায়নি। তাই চর্যাপদের নির্দিষ্ট রচনাকাল বলা সম্ভব নয়। তবে চর্যাপদের যে কজন আলোচনকারী ছিলেন তাদের কেউ ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় আবার কেউ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর এ দুটি প্রধান মতের অনুসারী ছিলেন। অর্থাৎ এ ব্যাপারে সবাই একমত যে, চর্যাপদের রচনাকাল ১০ম থেকে ১২শ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত।

চর্যাপদের ছন্দ ও অলংকার

চর্যার পদগুলি প্রধানত পয়ার ও ত্রিপদী পদে রচিত। এতে মাত্রাছন্দের প্রভাবও দেখা যায়। ১৬ মাত্রার পাদাকুলক ছন্দের ব্যবহারই এখানে বেশি। তবে সর্বত্র নির্দিষ্ট মাত্রারীতি দেখা যায়নি। ছন্দপংক্তির পর্ব সংখ্যাগত বৈচিত্র্যও এই পদগুলির অন্যতম বৈশিষ্ট্য। ডক্টর অসিত কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করেন, “তত্ত্বকথার ব্যাখ্যা এবং তাকে ব্রাহ্মণ সমাজের শ্যেনদৃষ্টি থেকে গোপন করা – এই দিকে পদকর্তারা এবং সিদ্ধাচার্যরা অত্যন্ত সচেতন ছিলেন বলে কবিতার আঙ্গিকের দিকে দৃষ্টি দেবার অবকাশ পাননি। তবে একটা কথা সত্য, চর্যাগানেই সর্বপ্রথম পয়ার-ত্রিপদীর আদিসুর ধ্বনিত হয়েছে। সংস্কৃতে রচিত গীত গোবিন্দও এর প্রভাব অস্বীকার করতে পারেনি।”

চর্যায় অনুপ্রাসের প্রয়োগ ব্যাপক। প্রায় প্রতিটি পদই অন্ত্যমিলযুক্ত। অন্তানুপ্রাসও প্রচুর। যেমন: “বাহ তু ডোম্বী বাহ লো ডোম্বী বাটত ভইলা উদারা”। চর্যায় উল্লিখিত ছন্দ ও অলংকারগুলি পরবর্তীকালের কবিদের পথপ্রদর্শকস্বরূপ হয়েছিল।

চর্যাপদের ভাষা

ভাষা

চর্যাপদের ভাষা বাংলা কি-না সে বিষয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল পরবর্তীতে যার অবসান হয়েছে। এটি সৃজ্যমান বাংলা ভাষার একটি গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন। চর্যাপদের রচয়িতা বৌদ্ধ সিদ্ধাচার্যগণ সংস্কৃতে পারদর্শী হলেও তাঁরা তৎকালীন অপরিণত বাংলাতেই পদগুলি রচনা করেছিলেন। চর্যাপদের ভাষা বাংলা ভাষার অদ্যাবধি আবিষ্কৃত আদিতম রূপ। হিন্দি, ওড়িয়া বা মৈথিলি বিজ্ঞজনেরা এই ভাষায় নিজেদের পূর্ব সূরিত্বের সন্ধান করলেও ভাষা বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের ফল বাংলা ভাষারই অনুকূল। এই ভাষা সম্প্রদায়বিশেষের সাধন-সঙ্গীতের ভাষা বিধায় অস্পষ্ট ও দুর্বোধ্য; যদিও এতে উল্লিখিত ছন্দ ও রাগ-রাগিনী পরবর্তীকালের বাঙালি কবিদের পথ নির্দেশিকারূপে কাজ করে।

ভাষা-বিতর্ক

চর্যাপদ সংগ্রহ প্রকাশিত হবার পর চর্যার ভাষা নিয়ে যেমন প্রচুর গবেষণা হয়েছে, তেমনি ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের বিজ্ঞজনেরা এই ভাষার উপর নিজ নিজ মাতৃভাষার অধিকার দাবি করে বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন।

হরপ্রসাদ শাস্ত্রী তাঁর সম্পাদিত হাজার বছরের পুরাণ বাঙ্গালা বৌদ্ধ গান ও দোহা গ্রন্থের ভূমিকায় চর্যাচর্যবিনিশ্চয়, সরহপাদ ও কৃষ্ণাচার্যের দোহা এবং ডাকার্ণব-কে সম্পূর্ণ প্রাচীন বাংলার নিদর্শন বলে দাবি করেছেন। শ্রী কৃষ্ণকীর্তন কাব্যের আবিষ্কর্তা ও সম্পাদক বসন্ত রঞ্জন রায় বিদ্বদ্বল্লভও তাঁর দাবিকে সমর্থন করেন। ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে বিজয়চন্দ্র মজুমদার তাঁদের দাবি অস্বীকার করে চর্যা ও অন্যান্য কবিতাগুলির সঙ্গে বাংলা ভাষার সম্বন্ধের দাবি নস্যাৎ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে ডক্টর সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় তাঁর The Origin and Development of the Bengali Language গ্রন্থে চর্যাগান ও দোহাগুলির ধ্বনিতত্ত্ব, ব্যাকরণ ও ছন্দ বিশ্লেষণ করে শুধুমাত্র এইগুলিকেই প্রাচীন বাংলার নিদর্শন হিসাবে গ্রহণ করেন। ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ প্যারিস থেকে প্রকাশিত Les Chants Mystique de Saraha et de Kanha গ্রন্থে সুনীতি কুমারের মত গ্রহণ করেন।

যে সকল ভাষাতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য চর্যার সঙ্গে বাংলার সম্পর্ককে প্রমাণ করে সেগুলি হলো

সম্বন্ধ পদে –অর বিভক্তি, সম্প্রদানে –কে, সম্প্রদান বাচক অনুসর্গ –অন্তরে (মধ্যযুগীয় ও আধুনিক রূপ –তরে), অধিকরণে –অন্ত, -ত, অধিকরণ বাচক অনুসর্গ –মাঝে, অতীত ক্রিয়ায় –ইল এবং ভবিষ্যত ক্রিয়ায় -ইব। চর্যা মৈথিলী বা পূরবীয়া হিন্দিতে রচিত হলে অতীত ক্রিয়ায় –অল ও ভবিষ্যতে –অব যুক্ত হত।

গুনিয়া, লেহঁ, দিল, ভণিআঁ, সড়ি, পড়িআঁ, উঠি গেল, আখি বুজিঅ, ধরণ ন জাঅ, কহন না জাই, পার করেই, নিদ গেলা, আপনা মাংসে হরিণা বৈরী, হাড়ীত ভাত নাহি ইত্যাদি বাগভঙ্গিমা ও শব্দ যোজনা বাংলা ভাষায় পরবর্তীকালেও সুলভ। এর সঙ্গে অবশ্য তসু, জৈসন, জিস, কাঁহি, পুছমি প্রভৃতি পশ্চিমা অপভ্রংশের শব্দও আছে। তবে সেগুলি মূলত কৃতঋণ শব্দ হিসাবেই চর্যায় ব্যবহৃত হয়েছে।

এছাড়া সম্প্রদানে –ক এবং –সাথ, -লাগ, -লগ-এর বদলে সঙ্গে, সম অনুসর্গের ব্যবহার এবং নাসিক্য ধ্বনির বাহুল্যের জন্য চর্যার ভাষাকে রাঢ় অঞ্চলের ভাষা বলে মনে করা হয়। অসিত কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় মন্তব্য করেছেন, “চর্যার আচার্যেরা কামরূপ, সোমপুরী, বিক্রমপুর – যেখান থেকেই আসুন না কেন, আশ্চর্যের বিষয়, এঁরা সকলেই রাঢ় অঞ্চলের ভাষানীতি গ্রহণ করেছিলেন।”

রাহুল সাংকৃত্যায়ন বা অন্যান্য ভাষার বিদ্বজ্জনেরা যাঁরা চর্যাকে নিজ নিজ ভাষার প্রাচীন নিদর্শন বলে দাবি করেছিলেন, তাঁরা এই রকম সুস্পষ্ট ও সুসংহত বৈজ্ঞানিক প্রমাণের দ্বারা নিজেদের দাবি প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হননি।

সন্ধ্যা ভাষা

চর্যাপদের ভাষা অস্পষ্ট ও দুর্বোধ্য। সেই কারণে চর্যায় ব্যবহৃত ভাষাকে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী বলেছেন সন্ধ্যা ভাষা। তাঁর মতে,

“ সহজিয়া ধর্মের সকল বই-ই সন্ধ্যা ভাষায় লেখা। সন্ধ্যা ভাষার মানে আলো-আঁধারি ভাষা, কতক আলো, কতক অন্ধকার, খানিক বুঝা যায়, খানিকটা বুঝা যায় না। অর্থাৎ, এই সকল উঁচু অঙ্গের ধর্মকথার ভিতরে একটা অন্য ভাবের কথাও আছে। সেটা খুলিয়া ব্যাখ্যা করিবার নয়। যাঁহারা সাধন ভজন করেন তাঁহারাই সে কথা বুঝিবেন, আমাদের বুঝিয়া কাজ নাই। ”

বজ্রযানী ও সহজযানী গ্রন্থকারগণ প্রায়শ ‘সন্ধ্যা ভাষায় বোদ্ধব্যম্’ বলে এক রহস্যের ইঙ্গিত দিতেন। বজ্রযানী গ্রন্থগুলিতে ‘সন্ধ্যা ভাষা’ শব্দটি বহুল-ব্যবহৃত। তিব্বতি ভাষায় ‘সন্ধ্যা ভাষা’র অর্থ ‘প্রহেলিকাচ্ছলে উক্ত দুরুহ তত্ত্বের ব্যাখ্যা’। যদিও মহামহোপাধ্যায় বিধু শেখর শাস্ত্রী ও ডক্টর প্রবোধচন্দ্র বাগচী ‘সন্ধ্যা’র বদলে সন্-ধা ধাতু থেকে নিষ্পন্ন ‘সন্ধা’ শব্দটি ব্যবহারের পক্ষপাতী। তাঁদের মতে, ‘সন্ধ্যা’ লিপিকরদের প্রমাদ। ‘সন্ধা’ শব্দের অর্থ ‘অভিপ্রেত, উদ্দিষ্ট, আভিপ্রায়িক বচন’। ম্যাক্সমুলার ‘সন্ধা’র অর্থ করেছেন ‘প্রচ্ছন্ন উক্তি’ (‘hidden saying’)। চর্যার ধর্মীয় প্রসঙ্গের সঙ্গে ‘সন্ধা’ এ-দিক দিয়ে যুক্তিগ্রাহ্য হলেও, যেহেতু অধিকাংশ পুঁথিতেই ‘সন্ধ্যা’ শব্দটি রয়েছে সেই কারণে হরপ্রসাদের অর্থেই আধুনিক গবেষকগণ এই শব্দটি গ্রহণ করেছেন। চর্যাপদের গুপ্ত ভাষার বৌদ্ধ - তান্ত্রিক ব্যাখ্যার চেষ্টা করা হয়েছে।

চর্যাপদের ভাষা ধ্বনি ও রূপতত্ব

ভাষাতত্ত্ব

প্রাচীন বাংলার ভাষা তাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্যগুলির সন্ধানে প্রাকৃত বাংলায় রচিত চর্যাপদ একটি মূল্যবান উপাদান। ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে ডক্টর সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায় প্রথম এই বৈশিষ্ট্যগুলি নিয়ে বিজ্ঞানসম্মত আলোচনা করেন তাঁর The Origin and Development of the Bengali Language গ্রন্থে। এরপর ডক্টর সুকুমার সেন, ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, তারাপদ মুখোপাধ্যায়, পরেশচন্দ্র মজুমদার ও ডক্টর রামেশ্বর শ' চর্যার ভাষাতত্ত্ব নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা করেন। ফলে আজ চর্যার ভাষার স্বরূপটি অনেক বেশি সুস্পষ্ট হয়ে গেছে।

ধ্বনিতত্ত্ব

চর্যায় অ-কার কিছু বেশি বিবৃত ; কতকটা আধুনিক আ-এর কাছাকাছি। সম্ভবত আদি স্বরের শ্বাসাঘাতের জন্য অ/আ ধ্বনির বিপর্যয় দেখা যায়। যেমন: অইস/আইস, কবালী/কাবালী, সমাঅ/সামাঅ ইত্যাদি।

ব্যঞ্জনধ্বনির ক্ষেত্রে প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো: পদ মধ্যে ‘হ’-ধ্বনির সংরক্ষণ (যেমন: খনহ, তঁহি, করহ ইত্যাদি); মহাপ্রাণ বর্ণের অস্তিত্ব (যেমন: আহ্মে, কাহ্ন, দিঢ় ইত্যাদি) এবং ওড়িয়া-সুলভ ‘ল’ (l)-ধ্বনি বজায় থাকা।

প্রাকৃতের সমযুগ্মব্যঞ্জন সরলীকৃত হয়ে চর্যায় একক ব্যঞ্জনে পরিণত হয়েছে। ফলে পূর্বস্বরের পূরক দীর্ঘত্ব ঘটেছে। যেমন: প্রাচীন ভারতীয় আর্য ‘মধ্য’> মধ্য ভারতীয় আর্য ‘মজ্ঝ’> প্রাকৃত বাংলা ‘মাঝ’ ইত্যাদি।

নাসিক্য ব্যঞ্জনের পূর্বস্বর দীর্ঘত্ব লাভের সঙ্গে সঙ্গে অনুনাসিক হয়ে গেছে। যেমন: চন্দ্র>চন্দ>চাঁদ ইত্যাদি।

পাশাপাশি অবস্থিত একাধিক স্বরধ্বনির অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়। যেমন: উদাস>উআস। পদান্তেও স্বরধ্বনির ব্যবহার দেখা যায়। যেমন: ভণতি>ভণই ইত্যাদি।

পদান্তে স্থিত একাধিক স্বর যৌগিক স্বররূপে উচ্চারিত হতো এবং ক্রমে দুইয়ে মিলে একক স্বরে পরিণত হত। যেমন: প্রাচীন ভারতীয় আর্য ‘পুস্তিকা’> মধ্য ভারতীয় আর্য ‘পোত্থিআ’> প্রাকৃত বাংলা ‘পোথী’ ইত্যাদি।

‘য়’-শ্রুতি বিদ্যমান ছিল; ‘ব’-শ্রুতিও দেখা গেছে। যেমন: নিয়ড্ডী>নিয়ড়ি; নাই>নাবী ইত্যাদি।

চর্যায় স্বরসংগতির দু-একটি উদাহরণ মেলে। যেমন: সসুরা (<শ্বশুর) ইত্যাদি।

‘শ’, ‘ষ’, ‘স’ এবং ‘ন’, ‘ণ’-এর যথেচ্ছ ব্যবহার দেখা যায়। যেমন: নিঅ/ণিঅ, নাবী/ণাবী, সহজে/ষহজে, আস(<আশা) ইত্যাদি।

দীর্ঘস্বর ও হ্রস স্বরের উচ্চারণের পার্থক্য হ্রাস পেয়েছিল। যেমন: শবরি/সবরী, জোই/জোঈ ইত্যাদি।

পদের আদিতে ‘য’-ধ্বনি ‘জ’-ধ্বনিতে পরিণত হয়েছিল। যেমন: জাই/যাই।

রূপতত্ত্ব

চর্যার নামপদের লিঙ্গভেদ ছাড়াও সর্বনাম, বিশেষণ, সম্বন্ধবাচক শব্দেও লিঙ্গভেদ ছিল। যেমন: হরিণ/হরিণী, শবরা/শবরী, ‘রাতি পোহাইলি’, ‘গুঞ্জরী মালী’ ইত্যাদি।

একবচন-বহুবচনের পার্থক্য ছিল; সংখ্যাবাচক শব্দযোগে, সমষ্টিবাচক পদযোগে এবং দ্বিরুক্তিপদ প্রয়োগের দ্বারা বহুবচন বোঝান হতো। যেমন: ‘বতিস জোইনী’, ‘পঞ্চবিডাল’, ‘উঁচা উঁচা পাবত’ ইত্যাদি।

চর্যায় কারক মুখ্যত দুটি। যথা: মুখ্যকারক ও গৌণকারক। মুখ্যকারকে বিভক্তি শূণ্য বা -এ। যেমন: ‘সরহ ভণই’, ‘কুম্ভীরে খাঅ’ ইত্যাদি। গৌণকারকে -এঁ বা -এ বিভক্তি। যেমন: ‘সহজে থির করি’ (কর্ম কারক), ‘কুঠারে ছিজঅ’ (করণ কারক), ‘হিএঁ মাঝে’ (অধিকরণ কারক) ইত্যাদি। বিভক্তিহীনতার উদাহরণও পাওয়া যায়। যেমন: ‘কায়া তরুবর’।

-এর ও -ক বিভক্তির মাধ্যমে সম্বন্ধপদ নিষ্পন্ন হতো। যেমন: ‘রুখের তেন্তুলি’, ‘করণক পাটের আস’ ইত্যাদি।

-ক, -কে ও –রে বিভক্তি দ্বারা গৌণকর্মের ও সম্প্রদানের পদসিদ্ধ হতো। যেমন: ‘নাশক’, ‘বাহবকে পারই’, ‘রসানেরে কংখা’ ইত্যাদি।

-ই, -এ, -হি, -তেঁ ও –ত অধিকরণের বিভক্তি হিসাবে ব্যবহৃত হতো। যেমন: ‘নিঅড়ি’, ‘ঘরে’, ‘হিঅহি’, ‘সুখদুখেতেঁ’, ‘হাঁড়িত’ ইত্যাদি।

করণের বিশিষ্ট বিভক্তি –এঁ সপ্তমীর সঙ্গে প্রায় অভিন্ন হওয়ার কারণেও –তেঁ, -এতেঁ, -তে বিভক্তি দেখা যায়। যেমন: ‘সাঁদে’ (<শব্দেন), ‘বোধেঁ’ (<বোধেন), ‘মতিএঁ’, ‘সুখদুখেতেঁ’ (<সুখদুঃখ+এ+ত+এন)।

অপাদানে অপভ্রষ্ট থেকে আগত -হুঁ বিভক্তি দু-একটি পাওয়া গেছে। যেমন: ‘খেপহুঁ’, ‘রঅনহুঁ’।

চর্যাপদে গৌণকারকে ব্যবহৃত অনুসর্গেও (post position) বৈচিত্র্য দেখা যায়। যেমন: ‘ডোম্বী-এর সঙ্গে’ (নামবাচক অনুসর্গ), ‘দিআঁ চঞ্চালী’ (অসমাপিকা অনুসর্গ)।

সংস্কৃতের মতো কর্মভাববাচ্যের প্রচুর উদাহরণ চর্যাপদে আছে। যেমন: ‘নাব ন ভেলা দীসই’, ‘ধরণ ন জাই’ ইত্যাদি।

চর্যাপদে যৌগিক কালের উদাহরণ না থাকলেও যৌগিক ক্রিয়ার উদাহরণ প্রচুর আছে। যেমন: ‘গুণিআ লেহুঁ’, ‘নিদ গেল’ ইত্যাদি।

নিষ্ঠাপ্রত্যয়ে –এ বিভক্তি দেখা যায়। যেমন: ‘সহজে থির করি’ ইত্যাদি।

চর্যায় এমন সব বিশিষ্ট প্রয়োগ আছে যা বাংলা ভাষাভিন্ন অন্য ভাষায় পাওয়া যায় না। যেমন: ‘ভান্তি ন বাসসি’, ‘দুহিল দুধু’ ইত্যাদি।

কর্মভাববাচ্যে অতীতকালে –ই, -ইল এবং ভবিষ্যতকালে –ইব বিভক্তির প্রয়োগ দেখা যায়। যেমন: ‘চলিল কাহ্ন’, ‘মই ভাইব’ ইত্যাদি।

প্রাচীন বাংলার চর্যাপদে ব্যবহৃত প্রবচনগুলি বাংলা ভাষায় ঐতিহ্যবাহী। যেমন: ‘হাড়িত ভাত নাহি নিতি আবেশী’, ‘আপনা মাংসেঁ হরিণা বৈরী’ ইত্যাদি।

চর্যা ধর্মতত্ব

সিদ্ধাচার্যগণ অসামান্য কবিত্বশক্তির অধিকারী হলেও তাঁরা মূলত ছিলেন সাধক। বৌদ্ধ সহজযানী চিন্তা, দর্শন ও সাধনপদ্ধতিই তাই চর্যাপদের উপজীব্য হয়ে ওঠে। এই সহজযানী দর্শন একান্তই ভাববাদী। সিদ্ধাচার্যগণ সহজমার্গের পথিক ছিলেন। শুষ্ক তত্ত্বকথা নিয়ে তাঁরা সন্তুষ্ট থাকতেন না। সেজন্য প্রথাগত সংস্কারের ধারও তাঁরা ধরতেন না।

মায়াপ্রপঞ্চ ও দ্বৈতবোধের ঊর্ধ্বে স্থিত যে ‘বোধিচিত্ত’, সকল প্রকার দ্বৈতবোধ পরিহার করে সাধনযোগে অবধূতিকামার্গের পথে সেই ‘বোধিচিত্ত’কে ‘মহাসুখকমল’-এ স্থিত করাই সিদ্ধাচার্যদের সাধনার লক্ষ্য ছিল। এই ‘মহাসুখ’ সহজযান মতে একটি বিশেষ তত্ত্ব। সাধক ‘মহাসুখ’ লাভ করলে মায়াময় পৃথিবী সম্পর্কে জ্ঞানরহিত হন। এখানে হিন্দুদর্শনের সমাধিতত্ত্বের সঙ্গে ‘মহাসুখ’ দর্শনের সাদৃশ্য লক্ষ করা যায়। চর্যাকারগণ গুরুবাদকে স্বীকার করেছেন। কুক্কুরীপাদের মতে, এক কোটি লোকের মধ্যে একজন চর্যার গূহ্যার্থ অনুধাবনে সক্ষম। সেক্ষেত্রে গুরুভিন্ন গতি নেই। বাস্তবিকই চর্যার কথা লৌকিক অর্থের বদলে সংকেতে আবৃত হওয়ায় তা সর্বসাধারণের বুদ্ধিতে ঠিক ধরে না। এই দ্বৈতার্থের কয়েকটি নিদর্শন হলো: নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস অর্থে 'চন্দ্র', চিত্ত অর্থে 'হরিণ', জ্ঞানমুদ্রা অর্থে 'হরিণী', মহাসুখকায় অর্থে 'নৌকা', শবরী অর্থে 'দেবী নৈরাত্মা' ইত্যাদি।

সিদ্ধাচার্যগণ অসামান্য কবিত্বশক্তির অধিকারী হলেও তাঁরা মূলত ছিলেন ডোম্বীপার ১৪নং পদ:

‘বাহতু ডোম্বী বাহ লো ডোম্বী বাটত ভইল উছারা।

সদ্গুরু পাঅ পসাএ জাইব পুণু জিনউরা’

অর্থ: ডোমনি নদী পারাপার করছে, আর তারই মাধ্যমে সহজ সাধনার তীর্থধামে পৌঁছানোর আভাস সূচিত হচ্ছে।

চর্যাসংগীত

পটমঞ্জরী, কামোদ, বরাড়ী, গুঞ্জরী, গৌড়, দেশাখ, রামকেলি, আশাবরী, মালসী, অরু, দেবগিরি, ধানশী, বঙ্গাল, মল্লারী, ভৈরবী। (১৫টি)

চর্যাপদে নারী

কুক্কুরীপা কে মহিলা কবি মনে করা হয়। তিনি ইন্দ্রভূতির অন্যতম গুরু।

চর্যাপদ ও বাঙালি জীবন

চর্যাপদে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ : যেমন- ডোম, কামলি, শবর, চণ্ডাল, শুঁড়ি, ব্যাধ, মাঝি, তাঁতি, ধুনুরি, কাঠুরে, জেলে, পতিতা ইত্যাদি।

চর্যাপদের কবিগণ

বাঙালি কবিঃ বিরুআপা, কুক্কুরিপা, লুইপা, ডোম্বীপা, শবরপা, ধামপা, জঅনন্দপা, মৎসেন্দ্রনাথ।

কাহ্নপা

কাহ্নপাদ বা কাহ্ন পা বা কৃষ্ণপাদ বা কৃষ্ণাচার্য্য চুরাশিজন বৌদ্ধ মহাসিদ্ধদের মধ্যে একজন ছিলেন। পদের সংখ্যা ১৩ টি।

শবর পা

শবরপা প্রাচীনতম/আদি চর্যাকার। শবর পা রচিত ২৮নং চর্যার প্রথম দুটি পংক্তি-

উঁচু পর্বতে বাস করে এক শবরী বালা,

ময়ূরপুচ্ছ পরনে, গলায় গুঞ্জামালা।

ভুসুকু পা

তাঁর প্রকৃত নাম শান্তিদেব।

লুই পা

লুইপাদকেই আদি সিদ্ধাচার্য মনে করা হয়। ১ ও ২৯ নং পদদুটি তাঁর।

চাটিল্লপা

তাঁর চর্যায় সাঁকো তৈরির কথা আছে।

ঢেণ্ডণপা

ঢেণ্ডণ শব্দের অর্থ হচ্ছে ঢেঁড়ি অর্থাৎ ডুগডুগি বাজিয়ে ভিক্ষা মাগে যে।

কুক্কুরীপা

চর্যার ২ নং পদের পদকর্তা কুক্করিপা। তিব্বতীয় ঐতিহ্য অনুযায়ী তিনি একটি নেড়ি কুকুর পুষতেন।

মৎস্যেন্দ্রনাথ ও বিরুআপা

মৎস্যেন্দ্রনাথ/ মীননাথ

প্রথম বাঙালি কবি

বিরুআপা

বিরুআপা নামটি মূল সংস্কৃত হচ্ছে ‘বিরুপাক’। তিনি সোমপুর বিহারে বাস করতেন।

ধর্ম পা

ধাম বা ধর্ম পা কাহ্ন পার শিষ্য ছিলেন।

তাড়কপা

তার সম্পর্কে বিশেষ কিছু জানা যায় না। আসল নাম হল ‘নাড়কপা’। তবে ড.মুহম্মদ শহিদুল্লাহ্‌ এটিকে ভুল প্রমাণিত করেন।

সরহপা ও জয়নন্দী

সরহপা রচিত ৩৮ নং পদে খেয়া নৌকায় যাওয়ার বর্ণনা রয়েছে।

জয়নন্দী বাংলাদেশের এক রাজার মন্ত্রী ছিলেন। তিনি বর্ণে ব্রাহ্মণ।

বিঃদ্রঃ চর্যাপদের প্রতিটি কবির নামের শেষে “পা” শব্দটি যুক্ত আছে সন্নমান অর্থে। যারা পদ/পাদ রচনা করেন তাঁদের “পা” বলা হয়।

চর্যাপদের কবিদের মনে রাখার টেকনিক

বিবী শাধ করে আতা কিনে গুডো করে ভাজ করে। মহিদরপা কম্বলাম্বরপার কাছে চাঁদা চাইল।

১৪ জনের নাম আছে এখানে। এখন মিলিয়ে নিন
বি.>বিরুবাপা
বী> বীণা পা

শা>শান্তি পা
ধা> ধাম পা
আ > আ>আর্যদেব
তা> তাড়িক পা
গু> গুন্ডরী পা
ডো> ডোম্বী পা
ভা> ভদ্রপা (ভাদে)
জ> জয়নন্দী
মহিদর পা
কম্বলাম্বরপা

চা> চাটিপা
দা> দারিক

বাকি ১০ জনের নাম জোড়ায় জোড়ায় মনে রাখেন-
লুইপা- কাহ্নপা,
সবরপা- শরহপা,
ঢেণ্ডনপা- কঙ্কণপা,
ভুসুকুপা- কুক্কুরীপা,
লাড়ীডোম্বীপা- তন্ত্রীপা।

চর্যাপদে গানের সংখ্যা

চর্যাপদের মোট গানের সংখ্যা সুকুমার সেনের মতে ৫১ টি। অন্যদিকে ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্‌র মতে, চর্যায় গানের সংখ্যা ৫০ টি। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী কর্তৃক আবিষ্কৃত পুঁথিটিতে পূর্ণাঙ্গ পদ পাওয়া গেছে ৪৬টি। চর্যাপদগুলোরে সাথে মোট ১৫টি রাগের নাম পাওয়া যায়। পটমঞ্জরী, কামোদ, বরাড়ী, গুঞ্জরী, গৌড়, দেশাখ, রামকেলি, আশাবরী, মালসী, অরু, দেবগিরি, ধানশী, বঙ্গাল, মল্লারী, ভৈরবী।

চর্যাপদে প্রাপ্ত প্রবাদ-প্রবচনঃ     
চর্যাগীতিতে ৬টি প্রবাদ প্রবচন পাওয়া যায়। এগুলি হলঃ

ó ‘আপনা মাংসে হরিণা বৈরী’ (হরিণের মাংসই তার জন্য শত্রু),

ó ‘দুহিলা দুধু কি বেন্টে সমাঅ’ (দোহন করা দুধ কি আর বাটে প্রবেশ করানো যায়?),

ó `হাতের কাঙ্কণ মা লোউ দাপন' (হাতের কাকন দেখার জন্য দর্পণ প্রয়োজন হয় না),

ó `হাড়ীত ভাত নাহি নিতি আবেশী' (হাঁড়িতে ভাত নেই, অথচ প্রতিদিন অতিথি এসে ভীড় করে),

ó `বর সুন গোহালী কি মো দুঠ্য বলংদেঁ' (দুষ্ট গোরুর চেয়ে শূণ্য গোয়াল ভাল),

ó `আন চাহন্তে আন বিনধা' (অন্য চাহিতে, অন্য বিনষ্ঠ)।

চর্যাপদ থেকে সংগৃহীত ২৫০ টি প্রশ্নোত্তর


১)চর্যা শব্দের অর্থ কি?

👉আচরণ।

২)চর্যার আদি পদকর্তা কে?

👉লুই পা।

৩)চর্যাপদে কাকে চিএকবি বলা হয়?

👉 ভুসুক পা।

৪)চর্যার ভূমিকা কে লেখেন?

👉জখহ্নবীকুমার চক্রবর্তী।

৫)সুকুমার সেন কি নাম দেয় চর্যার?

👉চর্যাগীতিপদাবলী।

৬) চর্যা শব্দের ব্যুৎপত্তি গত অর্থ?

👉আচরণীয়।

৭)চর্যাপদ কোন রাজাদের আমলে রচিত হয়?

👉পাল ও সেন।

৮)নবচর্যাপদ এর প্রকাশ কাল?

👉১৯৮৯।

৯)চর্যাপদে নৌকার উল্লেখ কোন পদে আছে?

👉৪৯নং পদে।

১০) বাংলা সাহিত্যের আদিতম গ্ৰন্থটির নাম কী?

👉চর্যাপদ।

১১)নব চর্যাপদ কোথা থেকে প্রকাশিত?

👉 কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়।

১২) চর্যাপদের আবিষ্কার কতসালে?

👉১৯০৭।

১৩)চর্যাপদে পুঁথির শেষ সংখ্যা?

👉৬৯।

১৪)নব চর্যাপদে কতগুলো পদ আছে?

👉৯৮টি।

১৫)ভুসুক পার অপর নাম কি?

👉শান্তি পা।

১৬)হরপ্রসাদ শাস্ত্রী প্রথমবার নেপালে কত সালে রান?

👉১৮৯৭।

১৭)কার কোনো পদ পাওয়া যায়নি?

👉লাড়ি ডোম্বি পা।

১৮) চর্যাপদ কে প্রকাশ করেন?

👉 হরপ্রসাদ শাস্ত্রী।

১৯)কত নম্বর চর্যাপদে বাংলাদেশের কথা আছে?

👉৪৯।

২০)চর্যায় মোট কটি রাগ আছে?

👉২২টি।

২১)চর্যাপদের  মহিলা কবি কে?

👉কুক্কুরি পা।

২২)বাংলা সাহিত্যের আদি বা প্রথম কবি কে?

👉লুই পা।

২৩)চর্যাপদ প্রকাশের সময় বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ এর সম্পাদক কে ছিলেন?

👉 হরপ্রসাদ শাস্ত্রী।

২৪)চর্যাপদে কোন ধর্মের প্রকাশ ঘটেছে?

👉 বৌদ্ধ।

২৫)লুইপাদের লেখা প্রথম গ্রন্থ কী?

👉অভিসময়বিহঙ্গ।

২৬)বাঙ্গালী শব্দ টি কার কতো সংখ্যক পদে আছে?

👉৪৯।

২৭)চর্যাপদের হিন্দী নাম কী?

👉দোহা কোষ।

২৮)লুই পাদকে "অভিসময়বিভঙ্গ" রচনায় সাহায্য করেন কে?

👉 অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান।

২৯)কৌলিন্য প্রথার উল্লেখ কত নাম্বার পদে আছে?

👉১৮।

৩০)মোট কতগুলো প্রবাদ প্রবচন আছে চর্যাপদে?

👉৬টি।

৩১)মুনি দত্ত কোন তন্ত্রে অভিজ্ঞ?

👉 বৌদ্ধ।

৩২)চর্যাপদের পুঁথিটি কিসে লেখা?

👉 তালপাতার উপর।

৩৩)চর্যাপদে কয়টি চক্র?

👉৪টি।

৩৪)চর্যাপদে ব্যবহৃত রাগের সংখ্যা কত?

👉২২টি।

৩৫)মুনিদত্ত কত সংখ্যক টীকা বর্জন করেছেন?

👉১১টি।

৩৬)সাধনতত্ত্বে কন্ঠে উপস্থিত চক্রের নাম কি?

👉সম্ভোগ।

৩৭)চাচাগানের সন্ধান প্রথম কে পেয়েছিলেন?

👉আর্নল্ড বাকে।

৩৮)চর্যাপদ হল মূলত _____?

👉গানের সংকলন।

৩৯)কোন গ্রন্থ থেকে প্রমাণিত হয় মূল পুঁথিটির নাম "চর্যাগীতিকোষ"?

👉তেঙ্গুর গ্ৰন্থমালা।

৪০)চর্যাপদের সংস্কৃত টীকার নাম কী?

👉নির্মলগিরা টিকা।

৪১)চর্যাপদের কতকগুলি পদের ভনিতায় কবির নাম পাওয়া যায় নি?

👉৫টি।

৪২)গোরক্ষনাথের শিষ্য কে?

👉মীননাথ।

৪৩)প্রথম প্রকাশের সময় চর্যাপদের ভূমিকা কে লেখেন?

👉 হরপ্রসাদ শাস্ত্রী।

৪৪)মেখলা টীকা কে রচনা করেন?

👉 আচার্য পা।

৪৫)চর্যায় কোন কোন নদীর নাম আছে?

👉গঙ্গা, যমুনা।

৪৬)অভিসময়বিভঙ্গ রচনাটি কার?

👉লুই পা।

৪৭) রাউত কথার অর্থ কি?

👉 রাজপুত্র।

৪৮)চর্যা শব্দটি কোন ধাতু?

👉চর।

৪৯)কত নং পদে কোন্ পদকর্তা নিজেকে বাঙালি বলেছেন?

👉৪৯নং।

৫০)কে নিজেকে জালন্ধরী পার শিষ্য বলে পরিচয় দিয়েছেন?

👉কাহ্ন পা।

৫১)চর্যাপদে গুরুর কথা কত বার বলা হয়েছে?

👉১৩

৫২) কৌলিন্য প্রথার উল্লেখ আছে চর্যার কত নং পদে?

👉১৮ নং পদে

৫৩)চর্যার মোট প্রাপ্ত কবির সংখ্যা কত?

👉 ২২

৫৪) অমরকোষের টিকা কে লেখেন?

👉 কাহ্ন পা।

৫৫)৫ নং পদে কি লেখা আছে?

👉গুর্জোরী

৫৬)চর্যার প্রতিটি পাতায় ক’টি চরণ আছে?

👉৫ টি

৫৭)‘চর্যা’ শব্দের বুৎপত্তিগত অর্থ কি?

👉 গমনশীল

৫৮)চর্যাপদে কোন কোন যানবাহনের কথা আছে?

👉রথ, হস্তি, নৌকা, পালকি

৫৯) চর্যাপদের কত নং পদে ‘গীত’ শব্দের উল্লেখ আছে?

👉 ৩৩ নং পদে

৬০) জয়দেব কোন শতাব্দীর কবি?

👉দ্বাদশ

৬১)পদকর্তাদের মধ্যে মগধের রাজপুত্র কে ছিলেন?

👉 ডোম্বী

৬২)সর্বাধিক পদ রচনা করেছেন কোন পদকর্তা?

👉কাহ্ন পা

৬৩)চর্যার সর্বকনিষ্ঠ কবি কে?

👉কাহ্ন পা

৬৪) লুইপা কোন অঞ্চলের বাসিন্দা?

👉গৌড়

৬৫)চর্যার ইংরাজি অনুবা কে করেন?

👉পি সি বাগচী

৬৬) চর্যাপদ কে আবিষ্কার করেন?

👉হরপ্রসাদ শাস্ত্রী

৬৭) চর্যাপদের ‘চর্য্যাশ্চর্য্যবিনিশ্চয়’ নামটি কার দেওয়া?

👉হরপ্রসাদ শাস্ত্রী

৬৮) চর্যাপদের ফটো মূদ্রণ সংস্করণ কে প্রকাশ করেন?

👉নীলরতন সেন

৬৯)চর্যার আমলে প্রচলিত খেলাটির নাম কী?

👉দাবা

৭০)চর্যাপদকে ‘চাচাগান’ কে বলেছেন?

👉শশিভূষণ দাশগুপ্ত

৭১)সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় তাঁর কোন গ্রন্থে প্রমাণ করেছেন যে চর্যাপদের ভাষা বাংলা ভাষারই পূর্বসূরি?

👉The Origin And Development Of Bengali Language

৭২) চর্যাভাষা হিন্দি নয় কে প্রমাণ করেন?

👉 সুকুমার  সেন

৭৩) চর্যাপদে কার পদ সংখ্যা বেশী?

👉 কাহ্ন পা

৭৪) সদুক্তিকর্নামৃত কে সংকলন করেছিলেন?

👉শ্রীধর দাস

৭৫) চর্যাপদের ধর্মমত কি?

👉বৌদ্ধ সহজিয়া

৭৬)বৌদ্ধতান্ত্রিক সাহিত্যিকদের প্রতি গবেষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ কে প্রথম করেন? তাঁর রচনার নাম ও প্রকাশকাল কত?

👉 রাজা রাজেন্দ্র লাল মিত্র। The Sanskrit Buddhist literature in Nepal (1882)

৭৭) কোন্ পদ কর্তার পদে সমাজ জীবনের কথা সবচেয়ে বেশি ফুটে উঠেছে?

👉কাহ্ন পা

৭৮) ড: শহীদুল্লাহ কাকে চর্যার আদি পদকর্তা বলেছেন?

👉 সরহ পা

৭৯)বিষম ধ্রুবা কি?

👉 চর্যায় ধ্রুব পদটি যতক্ষণ সমবেত কন্ঠে গাওয়া হত তখন তাকে বিষম ধ্রুবা বলা হত।

৮০)জয়কান্ত মিশ্র কোন গ্রন্থে চর্যার মধ্যে মৈথিলী ভাষার দাবি করেছেন?

👉The History & Moithili Literature

৮১)চর্যাপদের তিব্বতী অনুবাদ কে করেন?

👉 মুনিদও

৮২)চর্যার মূল ধর্মতত্ত্বটি কি?

👉মহাসুখ নির্বাণ লাভ।

৮৩)চর্যাপদের কবি ও তাঁদের পদের সংখ্যাগুলি নিম্নরূপ –

👉 লুইপা -১, ২৯ নং পদ

কুক্কুরী পা- ২, ২০, ৪৮ নং পদ

বিরু পা -৩ নং পদ

গুন্ডরী পা -৪ নং পদ

চাটিল্লা পা -৫ নং পদ

ভুসুক পা- ৬, ২১, ২৩, ২৭, ৩০, ৪১, ৪৩, ৪৯ নং পদ

কাহ্ন পা -৭, ৯, ১০, ১১, ১২, ১৩, ১৮, ১৯, ২৪, ৩৬, ৪০, ৪২, ৪৫ নং পদ

কম্বালম্বর পা- ৮ নং পদ

ডোম্বী পা -১৪ নং পদ

শান্তি পা- ১৫, ২৬ নং পদ

মহীধর পা -১৬

বীণা পা -১৭

সরহ পা -২২, ৩২, ৩৮, ৩৯ নং পদ

শবর পা- ২৮, ৫০ নং পদ

আর্যদেব পা- ৩১ নং পদ

ঢেগুন পা -৩৩ নং পদ

দারিক পা -৩৪ নং পদ

ভাদে পা -৩৫ নং পদ

তাড়ক পা -৩৭ নং পদ

কঙ্কণ পা -৪৪ নং পদ

জয়নন্দী পা -৪৬ নং পদ

ধর্ম পা -৪৭ নং পদ

তন্ত্রী পা -২৫ নং পদ

৮৪)চর্যাপদের রাগের সংখ্যা কত?

👉১৭ টি

৮৫) চর্যাপদ নিয়ে গবেষণা করেছেনএমন কয় জন বিদেশী পণ্ডিতের নাম বলুন?

👉 Dr. Arnold Bake, Dr. G. Tucci, Per Kvaerne

৮৬) পদকর্তার নাম কুক্কুরী পা কেন?

👉লোক প্রচলিত আছে পদকর্তার সহচারী যোগিনী পুর্বজন্মে লুম্বিনী বনে কুক্কুরী থাকায় তাঁর নাম কুক্কুরী হয়েছে।

৮৭) চর্যাপদের কত নং পদে ‘বঙ্গ’ শব্দের উল্লেখ আছে?

👉৩৯ নং পদে

৮৮)কোন পদকর্তাকে ‘পন্ডিতাচার্য’ বলা হয়?

👉 কাহ্ন পা

৮৯)চর্যাপদের ফটো মূদ্রণ সংস্করণ কে প্রকাশ করেন?

👉ড. নীলরতন সেন ১৯৭৮ সালে।

৯০)চর্যাপদের কোন পদকর্তা  মগহের র্যা ছিলেন?

👉লুই পা।

৯১)চর্যাপদের সাধনতত্বে হৃদয়ে কিসের অবস্থান?

👉ধর্ম।

৯২)চর্যায় উল্লিখিত খেলার নাম কি?

👉দাবা।

৯৩) চতুরাভবন কার লেখা?

👉 ভুসুক পা।

৯৪)দরিদ্র পরিবারের চিত্র রয়েছে কোন পদে?

👉৩৩।

৯৫)চর্যাপদের যত সংখ্যক  পদে বুদ্ধ নাটকের কথা আছে?

👉১৭নং।

৯৬) কোন চর্যা পদকর্তার অপর নাম "অচল সেন"?

👉 ভুসুক পা।

৯৭)চর্যাপদে কোন অলংকারের প্রয়োগ ঘটেছে?

👉শ্লেষ,রূপক।

৯৮)বিবাহের কথা কতো সংখ্যক পদে আছে?

👉১৯।

৯৯)ডোম চন্ডালের কথা আছে কত নম্বর পদে?

👉১০নং।

১০০) চর্যার ভাষাবিজ্ঞানীর নাম কি?

👉 সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়।

১০১) চর্যার একজন মুসলিম গবেষকের নাম কী?

👉 মহঃ শহীদুল্লাহ।

১০২)চর্যার একজন হিন্দি গবেষকের নাম কী?

👉রাহুল সাংকৃত্যায়ন

১০৩) চর্যাপদের ভাষা আলো আঁধারী কে বলেছেন?

👉হরপ্রসাদ শাস্ত্রী

১০৪) ODBL প্রথম কোথা থেকে প্রকাশিত হয়?

👉লন্ডন থেকে

১০৫)‘নবচর্যাপদ’ কে সম্পাদনা করেন?

👉অমিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়

১০৬)চর্যাপদের কবিতা গুলি কোন ছন্দে লেখা?

👉পাদাকুলক

১০৭) চর্যার সাধনতত্ত্বে নাভি ও হৃদয় অবস্থিত চক্রের নাম কি?

👉নাভি নির্মাণ চক্র ও হৃদয় ধর্ম চক্র

১০৮) চর্যাগীতি কোন কালিতে লেখা হয়?

 👉উজ্জ্বল কালো

১০৯)চর্যাপদের প্রথম পদটি কোন রাগে গীত হয়েছে?

👉পটমঞ্জরী

১০৯) কম্বলাম্বর রচিত একটি বইয়ের নাম বলুন।

👉অভিসময়নাম্পঞ্জিকা

১১০) ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ এর মতে প্রাচীন চার্যাকার কে?

👉শবর পা

১১১)চর্যাপদ কোন ভাষার প্রাচীনতম দৃষ্টান্ত?

👉বাংলা ভাষার

১১২) যে চর্যাকার নিজেকে রাজপুত্র এবং বাঙালী বলে ঘোষণা করেন?

👉ভুসুকু পা।

 ১১৩) চর্যাপদে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদকর্তার নাম কি?

👉ভুসুক পা

১১৪)সুনীতিকুমারের পূর্বে কে চর্যার ভাষাকে প্রাচীন বংলা বলেছেন?

👉 জেকবি সাহেব

১১৫)চর্যার টীকার তিব্বতি অনুবাদ কে আবিষ্কার করেন?

👉প্রবোধচন্দ্র বাগচী

১১৬)চর্যাপদকে মৈথিলী ভাষার আদি নিদর্শন কে বলেছেন?

👉জয়ন্ত মিশ্র

১১৭)‘সন্ধ্যা’ ও ‘সন্ধা’ শব্দ দুটির অর্থ কি?

👉সন্ধ্যা- যা ধ্যান করে পাওয়া যায়।  সন্ধা – যা অনুসন্ধান করে পাওয়া যায়।

১১৮) চর্যাপদের আখ্যাপত্রে নামটি কীভাবে লেখা ছিল?

 👉হাজার বছরের বৌদ্ধগান ও দোঁহা

১১৯)কবীন্দ্রসমুচ্চয়ের প্রকৃত নাম কী?

👉সুভাষিতরত্নকোষ

১২০)‘অপণা মাংসেঁ হরিণা বৈরী’ – কার লেখা?

👉ভুসুক পাদ

১২১)চর্যাপদকে কেন্দ্র করে একটি ছোটগল্পের নাম ও রচয়িতার নাম লেখ।

 👉চর্যাপদের হরিণী – দীপেন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায়

১২২)চর্যাপদের রচনাকাল কত?

 👉সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়এর মতে দশম থেকে দ্বাদশ শতাব্দী

১২৩)চর্যার কোন কবি পেশায় তাঁতি ছিলেন?

👉ঢেণ্ঢণ পা

১২৪)রাহুল সাংকৃত্যায়ন তার কোন গ্রন্থে চর্যাপদকে হিন্দির সামগ্রী বলে গ্রহণ করেছেন?

👉‘হিন্দি কাব্যধারা’

১২৫) সুভাষিত রত্নকোষ এর সম্পাদক কে?

👉এফ ড . টমাস সম্পাদনা করে ১৯১২ সালে প্রকাশ করেন।

১২৬)চর্যাপদের পুঁথির কটি পাতা পাওয়া গেছে?

👉৬৪ টি পাতা

১২৭)“নগর বাহিরি ডোম্বি তোহোর কুড়িআ” – পদটি কার লেখা?

👉কাহ্ন পা

১২৮)চর্যাপদে কটি করে অর্থ আছে ও কী কী?

👉২টি। যথা–একটি লৌকিক অর্থ। অন্যটি আধ্যাত্মিক অর্থ।

১২৯)তিব্বতি টীকায় একে ‘পঞ্চকর্মেন্দ্রিয়’ বলা হয়েছে। এই ‘পঞ্চকর্মেন্দ্রিয়’ কী?

👉 চর্যাপদে একটি পদ রয়েছে – ‘কা আ তরুবর পঞ্চবি ডাল’। চর্যাগীতির এই পঞ্চবি ডাল হল ‘পঞ্চস্কন্ধ’ অর্থাৎ রুপ, বেদনা, সংজ্ঞা, সংস্কার ও বিজ্ঞান। তিব্বতি টীকায় যাকে বলা হয়েছে ‘পঞ্চকর্মেন্দ্রিয়’।

১৩০) চর্যার মূল ধর্মতত্ত্বটি কি?

👉 মহাসুখ রূপ নির্বাণলাভ

১৩১) ‘আজি ভুসুকু তুই বঙ্গালি ভইলি’- ভুসুকুর বাঙ্গালি হবার নির্দিষ্ট কারণটি কি?

👉কারণ ভুসুকু একজন বাঙালি নারীকে বিবাহ করেছিলেন৷

১৩২)ভুসুক পার প্রকৃত নাম কী?

👉শান্তি দেব

১৩৩) কুক্করী পা এর পদাবলী সংখ্যা?

👉

১৩৪)‘ভবণই গহন গম্ভীর বেগে বাহী’ – পদটির রচয়িতা?

👉চাটিল পা

১৩৫) “তুলা ধুনি ধুনি আয়ু রে আয়ু’ কার লেখা?

👉শান্তি পা

১৩৬)‘নাচন্তি বাজিল গান্তি দেবী’ –  পদটির রচয়িতা কে?

👉বীণা পা

১৩৭)চর্যার দুটি সামাজিক বৈশিষ্ট্য বলুন।

👉বর্ণাশ্রমপ্রথা ও অন্ত্যজ শ্রেণীর মানুষের জীবনচিত্র

১৩৮)মেঘলা টিকা কে রচনা করেন?

👉আচার্য পা

১৩৯) “মুক্তক সৃষ্টির গৌরব রবীন্দ্রনাথের নয়, চর্যাকবিরই প্রাপ্য।” এই মন্তব্যটি কে করেছিলেন?

👉তারাপদ ভট্টাচার্য

১৪০)কালবিবেক কার রচনা?

👉জীমূতবাহন

১৪১)“বেগ সংসার বডহিল জাঅ”- কার রচনা?

👉ঢেণ্ঢণ পা

১৪২) চর্যাপদের সমসাময়িক আর একটি সাহিত্যর নাম কি?

👉ডাকার্ণব

১৪৩) চর্যাপদ এ চন্দ্র ও সূর্য্য কিসের প্রতীক?

👉গ্রাহ্য আর গ্রাহ্যকত্বের প্রতীক

১৪৪) চর্যাকারদের নমের শেষে পাদ বা পা ব্যাবহার করা হয় কেন?

👉সম্মানজনক বৌদ্ধ সহজিয়া সাধকগোষ্ঠীর ব্যাবহৃত টোটেম।

১৪৫)নাটক এর কথা কতো নং পদটি তে আছে?

👉১৭।

১৪৬)কন্ঠে অবস্থিত চক্রের নাম কি?

👉সম্ভোগ।

১৪৭) চর্যার লিপি বিচারক কে?

👉রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়।

১৪৮)চর্যার কোন কবিকে চিত্রধর্মী কবি বলা হয়?

👉 ভুসুক পা।

১৪৯) আশ্চর্যচর্য্যাচয় নামটি কার দেওয়া?

👉বিধুশেখর শাস্ত্রী।

১৫০)চর্যাপদ অবলম্বনে আধুনিক উপন্যাসের নাম কী?

👉 নীল ময়ূরের যৌবন,বেনের মেয়ে।

১৫১)চর্যাপদের পুঁথিটি কবে রাজ গ্রন্থাগারে সংরক্ষিত হয়েছিল?

👉১৬২০ খ্রিঃ

১৫২)চর্যাপদের কোন অলংকার সব চেয়ে বেশী ব্যবহার হয়েছে?

👉রূপক

১৫৩)কোন আমলে চর্যাপদ রচিত হয়েছিল?

👉পাল রাজাদের আমালে

১৫৪)চর্যার পদকর্তাগণ কি নামে পরিচিত?

 👉সিদ্ধাচার্য

১৫৫)চর্যাপদে কোন কবির পদ মেলেনি?

👉লাড়ীডোম্বী পদ

১৫৬) ‘মেখলা’ টিকা কোন ভাষায় রচিত?

👉সংস্কৃত

১৫৭) কণ্ঠে অবস্থিত চক্রের নাম কি?

👉সম্ভোগ চক্র

১৫৮)নবচর্যা পদ কবে প্রকাশিত হয়?

👉 ১৯৮৯

১৫৯)হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর আসল নাম কি?

👉শরৎনাথ ভট্টাচার্য

১৬০)চর্যার পুঁথির উপরে কি নাম লেখা আছে?

👉চর্যাচর্যটিকা

১৬১) নিতি শব্দের অর্থ কি?

 👉প্রতিদিন

১৬২)প্রাচীন বাংলা কোন উপভাষার উপর চর্যাপদ প্রতিষ্ঠিত?

👉রাঢ়ি

১৬৩)চর্যাপদের তিব্বতী অনুবাদ কে করেন?

👉কীর্তিচন্দ্র

১৬৪)কাহ্ন পার পুঁথির আসল নাম কি?

👉চর্যাগীতিকোষবৃত্তি

১৬৫)চর্যার কোন পদটি অর্ধেক পাওয়া যায়?

👉২৩ নং

১৬৬)চর্যার প্রথম ও শেষ কবি কে?

👉প্রথম পদকর্তা লুই পাদ ও শেষ কাহ্ন পা।

১৬৭) ‘লুই’ শব্দটি কোথা থেকে এসেছে?

👉রোহিত

১৬৮)চর্যার কোন পদে পদকর্তা নিজেকে বাঙালী বলেছেন?

👉৪৯

১৬৯) বাংলা সাহিত্যের আদি আধার কোনটি?

👉চর্যাপদ

১৭০)চর্যাকে ভাষাকথামৃত প্রধানত কোন অপভ্রংশের উপর প্রতিষ্ঠিত?

👉 শৌরসেনী

১৭১)চর্যার কোন পদে নাটক কথাটি পাওয়া যায়?

👉 ১৭ নং

১৭২)চর্যাগীতি অবলম্বনে রচিত উপন্যাস?

👉নীলময়ূরের যৌবন

১৭৩) চর্যার গানে কোন রাগটি পাওয়া যায়?

👉মল্লার রাগ

১৭৪)চর্যাপদে ও শ্রীকৃষ্ণকীর্তনে কি রাগ আছে?

👉বরাড়ী

১৭৫)“তাতল মোর ঘর” কথাগুলি কার পদে পাওয়া যায়?

👉ঢেণ্ঢণ পার পদে

১৭৬)‘রাইতু’ শব্দের অর্থ কি?

👉রাজপুত

১৭৭)“সোনে ভরিতি করুণা নাবী” – কার লেখা?

👉কামলী পাদ

১৭৮)ডোম জাতির কথা কোন পদে বার বার এসেছে?

👉১০ নং পদে

১৭৯)কয়টি পদ পাদাকুলক ছন্দে লেখা?

👉৩৬

১৮০) চর্যাপদ নিয়ে আলোচনা করেছেন এমন অবাঙালী কে আছেন?

👉রাহুল সংকৃত্যায়ন, জয়কান্ত মিশ্র

১৮১)কত জন কবি একটা করে পদ রচনা করেছেন?

 👉১৬

১৮২)বিরুপা শব্দের উৎপত্তি হয় কোথা থেকে?

👉বিরুপক

১৮৩)দাবা খেলা রুপকের সাধন প্রক্রিয়ার ব্যক্ত হয়েছে  কত সংখ্যক পদে?

👉১২

১৮৪)চর্যার মোট পদসংখ্যা কত?

👉৫০ (কিন্তু পাওয়া যায় সাড়ে ৪৬টি)

১৮৫)‘বিনিশ্চয়’ কথার অর্থ কি?

👉চর্যাগুলির অপূর্ব ব্যাখ্যা।

১৮৬)চর্যাগীতি কোন ছন্দে রচিত?

👉পাদাকুলক।

১৮৭)কাহ্ন পা পুরো নাম?

👉কৃষ্ণচার্য পা।

১৮৮)লুই পা শিষ্য কে?

👉দ্বারিক পা।

১৮৯) চর্যাপদ বহুড়ী শব্দের অর্থ কী?

👉অবধূতিকা।

১৯০)দুলি শব্দের অর্থ কী?

👉স্ত্রী কচ্ছপ।

১৯১) হরপ্রসাদ শাস্ত্রী আবিষ্কৃত চর্যাগীতিতে ব্যবহৃত রাগের সংখ্যা কয়টি?

👉১৯

১৯২)চর্যায় দারোগাকে কি বলা হয়?

👉উআরি।

১৯৩)চর্যার ভাষাকে মাগধী বা বিহারী কে বলেছেন?

👉 রাহুল সাংকৃত্যায়ন।

১৯৪)চর্যাগীতি অনুযায়ী তৎকালীন বাঙ্গালীদের প্রধান খাদ্য কি?

👉ভাত,মাছ।

১৯৫)কোন প্রাচীন সাহিত্যে প্রথম "বাঙালি" কথাটির উল্লেখ আছে?

👉চর্যাপদ।

১৯৬)চর্যাপদ নিয়ে গবেষণা করেছেন দুজন অবাঙালী পন্ডিতের নাম কী?

👉ধর্মবীর ভারতী,রাহুল সংস্কৃতায়ণ।

১৯৭)"বোধিচর্যাবতার" গ্রন্থের রচয়িতা কে?

👉 ভুসুক পা।

১৯৮)অনুত্তরস্বামী কাকে বলা হয়?

👉চাটিল পা।

১৯৯)চর্যায় মোট কটি গান আছে?

👉৫২টি।

২০০)হরপ্রসাদ শাস্ত্রী চর্যাপুঁথির কী নামকরণ করেন?

👉চর্যাচর্যবিনিশ্চয়।

২০১)কত নং পদ এ কামরূপের উল্লেখ আছে?

👉২ নং পদে

২০২)শেষ পদের রাগ কি?

👉রামক্রি

২০৩) ‘চর্যাপদ’ কেন নেপালে পাওয়া গেল?

👉বখতিয়ার খিলজির নেতৃত্বাধীন তুর্কিদের অত্যাচার, ধর্মকেন্দ্রিক পুঁথি পুরিয়ে ফেলার তাগিদ ইত্যাদিই প্রধান কারন৷

২০৪) চর্যার ভাষা বাংলা নয় কে বলেছেন?

👉বিজয়চন্দ্র মজুমদার।

২০৫)পটমঞ্জরী রাগে রচিত পদের সংখ্যা

👉১১ টি

২০৬) চর্যাপদে উল্লেখিত প্রসাধন ও অলঙ্কারের নাম কি?

👉তেল, আয়না, পুষ্পরেনু  হল প্রসাধন।  নুপুর,  কুন্ডল, কাঁকন, সোনা, রূপা, মুক্তাহার

২০৭)তিব্বতী অনুবাদ আবিষ্কার করেন কে?

👉প্রবোধচন্দ্র বাগচী

২০৮)চর্যাপদে উল্লেখিত কয়েকটি সামাজিক অনুষ্ঠানের নাম কি?

 👉ধর্মীয় উৎসব, বিয়ে

২০৯)শেষ পাতার ক্রম কত?

👉৬৯

২১০)চর্যাপদের ভাষাকে কে বাংলা ভাষা বলে দাবি করেছেন?

 👉সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়

২১১) চর্যাপদের পুঁথি শুরু হয়েছে কোন শব্দ দিয়ে?

👉 নমঃশ্রীবজ্রযোগিনৈ।

২১২) চর্যাপদ কোন ভাষায় রচিত?

👉বঙ্গ কামরূপী ভাষায়

২১৩) চর্যার স্তুতিবাচক অঙ্গের নাম কি?

👉বিরুদ্ধ

২১৪)“মোহোর বিগোআ কহণ ন জাই” এখানে নঞর্থক বাক্যাংশ কোনটি?

👉 ন জাই

২১৫) চর্যাপদের সংস্কৃত টীকাকার মুনি দত্তের টীকার নাম কী?

 👉নির্মলগিরাটিকা

২১৬) ‘জামে কাম কি কামে জাম’ ….কত সংখক পদ?

👉২২

২১৭)চর্যাপদের পুঁথি শুরু হয়েছে কোন্ শব্দ দিয়ে?

👉নমঃ শ্রী বজ্রযোগিন্য

২১৮)কত তম বারে নেপাল যাত্রায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী চর্যাপদ আবিষ্কার করেন?

👉তৃতীয়

২১৯)চর্যাপদের ব্যবহৃত উল্লিখিত প্রবাদের সংখ্যা কত?

 👉

২২০) হরপ্রসাদ শাস্ত্রী চর্যার পুঁথি আবিষ্কার করেন কতবার নেপাল যাত্রা করে?

👉

২২১)চর্যাপদ কোন অক্ষরে লিখিত?

👉নেওয়ারী

২২২)কোন কবি নিজেকে রাইতু বলে দাবি করেন?

👉ভুসুক পা

২২৩)‘তত্ত্বস্বভাবদোহাকোষগীতিকাদৃষ্টিনাম’ – গ্রন্থটির রচয়িতা কে?

👉লুই পা

২২৪)রাজারা কোন ধর্মের অনুসারী ছিলেন?

👉ব্রাহ্মণ্য ধর্ম

২২৫)চর্যাপদে “পুলিন্দ” শব্দের গূঢ় অর্থ কী?

👉নপুংসক

২২৬) “তিশরণ ণাবী কিঅ অঠকমারী” – এখানে ‘অঠকমারী’ মানে কি হতে পারে?

👉আটকে মেরে

২২৭) চর্যার পুথির মলাটে নাগরী হরফে কি লেখা ছিল?

 👉চর্যাচর্যটিকা

২২৮)রাহুলজির আবিষ্কৃত কোন কোন নতুন কবির চর্যাগান পাওয়া যায়?

👉বিনয়শ্রী /সরুঅ /অবধূ

২২৯) চর্যাভাষা হিন্দি নয় কে প্রমান করেন?

👉সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়।

২৩০)বৌদ্ধতান্ত্রিক সাহিত্যিকদের প্রতি গবেষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ কে প্রথম করেন? তাঁর রচনার নাম ও প্রকাশ সাল কত?

👉রাজা রাজেন্দ্রলাল মিত্র। The Sanskrit Buddhist literature in Nepal। ১৮৮২ খ্রিঃ

২৩১)ভুসুকু ভণিতা যুক্ত পদের সংখ্যা ক’টি?

👉

২৩২)অতীশ দীপঙ্করের গুরু ছিলেন কোন পদকর্তা?

👉শান্তি পা

২৩৩)চর্যাপদের একটি পদে ‘বেণি’ শব্দের উল্লেখ পাওয়া যায়।  ‘বেণি’ শব্দের অর্থ কী?

👉

২৩৪) রাহুল সাংকৃত্যায়ন তার কোন গ্রন্থে চর্যাপদকে হিন্দির সামগ্রী বলে গ্রহণ করেছেন?

👉‘হিন্দি কাব্যধারা’

২৩৫)চর্যাপদকে কেন্দ্র করে একটি ছোট গল্পের নাম ও রচয়িতার নাম লেখ

👉চর্যাপদের হরিণী – দীপেন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায়

২৩৬) নবচর্যাপদে পদ সংখ্যা কত?

👉২৫০ টি পদ আবিষ্কার হলেও তার মধ্য থেকে বেছে ৯৮ টি পদ সংকলন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত হয়।

২৩৭)নেপাল থেকে প্রাপ্ত পুঁথিতে চর্যাপদের নাম কি ছিল?

👉এ নিয়ে অনেক মতপার্থক্য আছে। কিন্তু এখন অবধি ‘চর্যাচর্যবিনিশ্চয়’ (চর্যাশ্চর্যবিনিশ্চয় নয়) নামটিই গৃহীত

২৩৮)চর্যায় সাধারণত কত মাত্রার ছন্দ বেশি ব্যবহৃত হয়েছে?

👉১৬ মাত্রা

২৩৯) পদকর্তার নাম কুক্কুরী পা কেন?

👉লোক প্রচলিত আছে তাঁর সহচারী যোগিনী পুর্বজন্মে লুম্বিনী বনে কুক্কুরী থাকায় তাঁর নাম কুক্কুরী

২৪০)চর্যাগীতিকে তারাবলী বলার কারণ কি?

👉তৎকালের প্রচলিত গীতের ৬ টি অঙ্গ থাকত – স্বর, বিরুদ, পদ, তেনক, পাটক ও তাল।এ ৬ টি অঙ্গের সব কয়টি চর্যাপদের সম্পর্কিত গানে থাকতে হবে এমন কোন কথানেই। পদ ও তাল চর্যাগীতিতে অবশ্যই থাকতো বলে একে তারাবলী বলা হতো।

২৪১)কোন ভাষার ইতিহাসে বাংলার মত চর্যাপদ পাঠ্য?

👉অসমীয়া সাহিত্য

২৪২) "পুরাতাত্ত্বিক নিবন্ধাবলী" গ্ৰন্থটির লেখক কে?

👉 রাহুল সাংকৃত্যায়ন।

২৪৩)"দুলি দুহি পিঠা "—পদটি কার লেখা?

👉লুই পা।

২৪৪)চোরের প্রসঙ্গ আছে কত নং পদে?

👉২।

২৪৫)দেহকে তরুর সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে কত নং পদে?

👉১।

২৪৬)হরিণ শিকার প্রসঙ্গ আছে কত নং পদে?

👉২।

২৪৭)ধাঁ ধাঁ এর প্রয়োগ কত নং পদে?

👉২,৩৩

২৪৮)করুণা পিহাড়ি খেলহুঁ নয়বল।

কত সংখ্যক পদ?

👉১২।

২৪৯)গৌড় বঙ্গের আদি ভাষ্য কাব্য কোনটি? 

👉চর্যাপদ।

২৫০)চর্যাপদ গুলি কোন ভাষায় রচিত?

👉 প্রাচীন বাংলা ভাষায়।


বিসিএস লিখিত পরীক্ষার জন্য কিছু প্রশ্নোত্তর

প্রশ্ন :-চর্যাপদের পরিচয় প্রদান করুন।

উত্তর :-চর্যাপদ হচ্ছে বাংলা সাহিত্যের এ পর্যন্ত পাওয়া একমাত্র প্রাচীন নিদর্শন। এগুলো বৌদ্ধ সহজিয়া ধর্মের সাধনতন্ত্র হলেও এখন তা কবিতা বা গানের সংকলন হিসেবে পরিচিত। এই পদগুলো হাজার বছর ধরে রচিত। আমরা তা পেয়েছি বিংশ শতাব্দীর প্রথম দশক ১৯০৭ সালে।
প্রশ্ন :-চর্যাপদের বিষয়বস্তু বা ধর্মতত্ত্ব লিখুন।
উত্তর : চর্যাপদ হচ্ছে বৌদ্ধ সহজিয়া ধর্মের সাধনতন্ত্র। কীভাবে সাধনা করলে সিদ্ধি লাভ করা যায় সে কথা লিখিত হয়েছে চর্যাপদে। বৌদ্ধ সহজিয়া ধর্ম বৌদ্ধ ধর্মের একটি শাখা। সহজিয়া মানে সহজ করণ। চর্যাপদের সাধকরা এ ধর্মটিকে সহজ করেছিলেন বলেই এরূপ নামকরণ করা হয়েছে।
প্রশ্ন :-চর্যাপদ আবিষ্কারের প্রেক্ষাপট লিখুন।
উত্তর : ১৮৮২ সালে প্রকাশিত The Sanskrit Buddhist Literature
গ্রন্থে রাজা রাজেন্দ্রলাল মিত্র সর্বপ্রথম নেপালের বৌদ্ধ তান্ত্রিক সাহিত্যের কথা প্রকাশ করেন। তাতে উদ্দীপ্ত হয়ে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী নেপালের রয়েল লাইব্রেরি থেকে ১৯০৭ সালে ঐ সাহিত্যের কতগুলো পদ আবিষ্কার করেন। তিনি নিজের সম্পাদনায় ১৯১৬ সালে এটি কলকাতার ‘বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ’ থেকে প্রকাশ করেন।
প্রশ্ন :-চর্যাপদের দুজন গবেষকের গবেষণা সম্পর্কে লিখুন।
উত্তর : চর্যাপদ নিয়ে অনেক গবেষকই গবেষণা করেছেন। চর্যাপদের দুজন বিখ্যাত গবেষক হলেন ড. সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায় ও ভাষা বিজ্ঞানী ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ। ১৯২৬ সালে ড. সুনীতি কুমার চট্টোপধ্যায় তাঁর The Origin and Development of Bengali Language গ্রন্থে চর্যাপদের ভাষাতত্ত্ব নিয়ে গবেষণা করেন এবং প্রমাণ করেন চর্যাপদ বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন নিদর্শন।
১৯২৭ সালে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ চর্যাপদের ধর্মতত্ত্ব ও এর আনুষঙ্গিক বিষয় নিয়ে গবেষণা করেন এবং তিনিও প্রমাণ করেন যে, চর্যাপদ বাংলা সাহিত্যেরই আদি নিদর্শন।
প্রশ্ন : চর্যাপদের নামকরণ সম্পর্কে লিখুন।
উত্তর : চর্যাপদের নামকরণ সম্পর্কে বিভিন্ন মত পাওয়া যায়। কারো মতে গ্রন্থটির নাম, ‘আশ্চর্য চর্যাচয়’, সুকুমার সেনের মতে ‘চর্যাশ্চর্যবিনিশ্চয়, আধুনিক প-িতদের মতে এর নাম ‘চর্যাগীতিকোষ’ আর হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর মতে ‘চর্য্যাচর্য্যবিনিশ্চয়’। তবে ‘চর্যাপদ’ সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নাম।
প্রশ্ন :-চর্যাপদ কবে, কোথা থেকে, কার সম্পাদনায় প্রকাশিত হয়?
উত্তর : মহামহোপাধ্যায় হর প্রসাদ শাস্ত্রী ১৯০৭ সালে নেপালের রয়েল লাইব্রেরি থেকে চর্যাপদ আবিষ্কার করেন। ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে (১৩২৩) কলকাতার ‘বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদ’ থেকে চর্যাপদ আধুনিক লিপিতে প্রকাশিত হয়। এর সম্পাদনা করেন মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী। চর্যাপদ প্রকাশিত হয় ‘হাজার বছরের পুরানো বাংলাভাষায় বৌদ্ধ গান ও দোহা’ নামে।
প্রশ্ন : চর্যাপদের ভাষা সম্পর্কে লিখুন।
উত্তর : চর্যাপদ প্রাচীন বাংলায় রচিত এ বিষয়ে সকল গবেষক একমত। তবে হাজার বছর আগে এই ভাষার মধ্যে কিছুটা অস্পষ্টতা ও জটিলতা রয়েছে। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী চর্যাপদের ভাষা সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন, ‘আলো আঁধারি ভাষা, কতক আলো, কতক অন্ধকার, খানিক বুঝা যায়, খানিক বুঝা যায় না।’ এ কারণেই চর্যার ভাষা সান্ধ্যভাষা নামে পরিচিত।
প্রশ্ন :-চর্যাপদের সমাজচিত্র লিখুন।
উত্তর : চর্যাপদ বৌদ্ধ সহজিয়া ধর্মের সাধনতন্ত্র হলেও পদকর্তাগণ তৎকালীন সমাজ চিত্রকে এড়াতে পারেননি। চর্যাপদে রয়েছে তৎকালীন সমাজে গ্রাম বাংলার নদী, নৌকার চিত্র, বেদে দলের কথা, হাটের পরিচয়, মাদল বাজিয়ে বিয়ে করতে যাওয়ার উৎসব, নববধূর নাকের নথ ও কানের দুল চোরে চুরি করার কথা। সর্বোপরি বাঙালির চিরন্তন ভাতের অভাবের কথাও চিত্রিত হয়েছে চর্যাপদে। ঢেন্ডন পা রচিত একটি পদ-
“টালত মোর ঘর নাহি পড়বেসী।
হাঁড়ীত ভাত নাহি নিতি আবেশী॥”
প্রশ্ন :-চর্যাপদের ছন্দ সম্পর্কে লিখুন।
উত্তর : পদকর্তাগণ আধুনিক ছন্দ বিচার করে চর্যার পদ লেখেননি। চর্যাপদের ছন্দ বিষয় নিয়ে আধুনিক ছান্দসিকগণ বহু গবেষণা করেছেন। অধিকাংশ ছান্দসিক মনে করেন, আধুনিক বাংলার কোন ছন্দে ফেলতে হলে চর্যাপদকে মাত্রাবৃত্ত ছন্দে ফেলতে হয়। যেমন-
“টালত মোর ঘর/নাহি পড়বেসী।
হাঁড়ীত ভাত নাহি/নিতি আবেশী॥”
প্রশ্ন :-চর্যাপদের কবিদের মধ্যে বাঙালি কবি কারা?
উত্তর : চর্যাপদের কবিদের মধ্যে বাঙালি বলে যাদের ধারণা করা হয়, তারা হচ্ছেন লুইপা, কুক্কুরী পা, বিরূপ পা, শবর পা, ধাম পা ও জয়ানন্দ।
প্রশ্ন :-চর্যাপদের কবিদের নামের শেষে পা যুক্ত করার কারণ কী?
উত্তর : ‘পা’ শব্দটি মূলত এসেছে পা >পাদ>পদ অর্থাৎ পদকর্তা। যিনি বা যারা পদ রচনা করতেন তিনি বা তারাই পদকর্তা বা কবি। আবার তারা সিদ্ধাচার্য হিসেবে পরিচিত ছিলেন বলে তাঁরা তাঁদের নামের শেষে সম্মান সূচক পা শব্দটি ব্যবহার করে গর্বিত বোধ করতেন।
প্রশ্ন :-চর্যাপদের কবি লুইপার পরিচয় প্রদান করুন।
উত্তর : চর্যাপাদের আদি কবি হলেন লুইপা। চর্যাপদের প্রথম কবিতা লুইপার লেখা।
কবিতাটি এরকম-“কাআ তরুবর পঞ্চবি ডাল।
চঞ্চল চীত্র পইঠা কাল॥”
তাঁকে বাংলা সাহিত্যের প্রথম কবি বলা হয়। তাঁর রচিত দুটি পদ পাওয়া গেছে।
প্রশ্ন :-কাহ্নপার পরিচয় প্রদান করুন।
উত্তর : চর্যাপদের কবিগণের মধ্যে সর্বাধিক পদরচয়িতার গৌরবের অধিকারী কাহ্নপা। তার তেরটি পদ চর্যাপদ গ্রন্থে গৃহীত হয়েছে। এ সংখ্যাধিক্যের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে কবি ও সিদ্ধাচর্যদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বলে অভিহিত করা যায়। কানুপা, কৃষ্ণপাদ
 ইত্যাদি নামেও তিনি পরিচিত। বিভিন্ন পদে কাহ্ন, কাহ্নু, কাহ্নি, কাহ্নিলা, কাহ্নিল্য প্রভৃতি ভনিতা লক্ষ্য করা যায়। খ্রিস্টীয় অষ্টম শতকে কানুপার আবির্ভাব হয়েছিল বলে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ মনে করেন। কানুপার বাড়ি ছিল উড়িষ্যায়, তিনি সোমপুর বিহারে বাস করতেন।
প্রশ্ন :-ভুসুকুপার পরিচয় প্রদান করুন।
উত্তর : চর্যাগীতি রচনার সংখ্যাধিক্যে দ্বিতীয় স্থানের অধিকারী হলেন ভুসুকুপা। তার রচিত আটটি পদ চর্যাপদ গ্রন্থে সংগৃহীত হয়েছে। নানা কিংবদন্তি বিচারে ভুসুকু নামটিকে ছদ্মনাম বলে মনে করা হয়। তার প্রকৃত নাম শান্তিদেব। তিনি মহারাষ্ট্রের রাজপুত্র ছিলেন এবং শেষ জীবনে নালন্দায় বৌদ্ধ ভিক্ষু হিসেবে নিঃসঙ্গভাবে অবস্থান করেন। ড. মুহম্মদ শহীদুলাহ্র মতে, শান্তিদেব ভুসুকু সাত শতকের দ্বিতীয়ার্ধে বর্তমান ছিলেন।
প্রশ্ন :-চর্যাপদের ভাষাকে সান্ধ্য ভাষা বলা হয়েছে কেন?
উত্তর : সন্ধ্যায় থাকে আলো আঁধারের খেলা। সন্ধ্যার সময় কোন কিছু স্পষ্টরূপে দেখা যায় না। তেমনিভাবে হাজার বছর আগে লেখা চর্যাপদের ভাষাতেও অস্পষ্টতা থাকার কারণে এই ভাষাকে সন্ধ্যা বা সান্ধ্য ভাষা বলা হয়েছে। কেউ কেউ এ ভাষাকে আলো আঁধারের ভাষা বলেছেন।
প্রশ্ন :-চর্যাপদের রচনাকাল সম্পর্কে লিখুন।
উত্তর : চর্যাপদের রচনাকাল নিয়ে যথেষ্ট মত পার্থক্য রয়েছে। ভাষা বিজ্ঞানী ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে ৬৫০-১২০০ সাল পর্যন্ত ৫৫০ বছরের মধ্যে রচিত। ড. সুনীতিকুমার চট্টোপধ্যায়ের মতে, চর্যাপদ ৯৫০-১২০০ পর্যন্ত ২৫০ বছরের মধ্যে রচিত। মূল কথা, চর্যাপদ পাল ও সেন আমলে রচিত।
প্রশ্ন : বাংলা সাহিত্যের কোন সময়কে অন্ধকার যুগ বলে অভিহিত করা হয়?
উত্তর : ১২০১ থেকে ১৮০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময় বাংলা সাহিত্যে মধ্যযুগ বলে বিবেচিত। কিন্তু ১২০১ থেকে ১৩৫০ খ্রিস্টাব্দ এই ১৫০ বছরকে কেউ কেউ অন্ধকার যুগ বলে অভিহিত করেন। এ যুগের স্বপক্ষে বলা হয় যে, তুর্কি বিজয়ের ফলে মুসলিম শাসনামলে সূচনার পটভূমিতে নানা অস্থিরতার কারণে এ সময়ে তেমন কোন উল্লেখযোগ্য সাহিত্য সৃষ্টি হয়নি। তবে এ সময়ে সামান্য কিছু সাহিত্যিক নিদর্শন পাওয়ায় কেউ কেউ এ যুগকে পুরোপুরি অন্ধকার যুগ বলতে নারাজ।
প্রশ্ন : মধ্যযুগের আদি নিদর্শন কোনটি?
উত্তর : মধ্যযুগের সাহিত্যের আদি নিদর্শন ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’। এটি বড়– চ-ীদাস রচিত একটি কাব্য নাট্য। চর্যাপদের পর ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্ম। এজন্য ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ কে মধ্যযুগের প্রথম কাব্য এবং বড়ু চ-ীদাসকে মধ্যযুগের আদি কবি বলা হয়।
প্রশ্ন : শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য কে, কীভাবে আবিষ্কার করেন?
উত্তর : ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে (১৩১৬ বঙ্গাব্দ) কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক এবং পুঁথিশালার অধ্যক্ষ বসন্তরঞ্জন রায় সংবাদ পান যে, পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলার বনবিষ্ণুপুরের কাছে কাকিল্যা গ্রামে দেবেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় নামক এক ব্রাহ্মণের বাড়িতে কিছু পুরাতন, হাতে লেখা পুঁথি আছে। সে বছরই তিনি সেখানে যান এবং ওই ব্রাহ্মণের গোয়াল ঘরে অযতেœ রক্ষিত একরাশ পুঁথির সাথে তিনি এ গ্রন্থটি পান। অযতেœ থাকায় এ পুঁথি অর্থাৎ হাতে লেখা গ্রন্থটির সম্মুখ ও শেষ ভাগ অসম্পূর্ণ ছিল।
প্রশ্ন : শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের রচনাকাল লিখুন।
উত্তর : বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগের প্রথম সাহিত্য শ্রীকৃষ্ণ কীর্তন। এ কাব্যটি কখন রচিত হয় তা নিয়ে যথেষ্ট মতভেদ রয়েছে গবেষকদের মধ্যে। অধিকাংশ গবেষকদের মতে, এ কাব্যটি চতুর্দশ শতাব্দীর শেষ দিকে অথবা পঞ্চদশ শতাব্দীর প্রথম দিকে রচিত হয়।
প্রশ্ন : ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ কাব্যের ভাব ও ভাষা কীরূপ?
উত্তর : শ্রীকৃষ্ণ কীর্তন কাব্য হচ্ছে এ পর্যন্ত প্রাপ্ত মধ্যযুগের প্রথম অখ- কাব্য। এ কাব্যের মোট ১৩টি খ- রয়েছে। দীর্ঘকাল ধরে লোকমুখে প্রচলিত গল্প-কাহিনী, পুরাণ এবং জয়দেবের গীতগোবিন্দের সমন্বিত প্রভাবে ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ কাব্য রচিত হয়। এর মূল কাহিনী ভাগবত থেকে সংকলিত। রাধা কৃষ্ণের প্রেম বিরহই এ কাব্যের মূল উপজীব্য। এ কাব্যের কাহিনী বাহ্যিক দিক থেকে পৌরাণিক রাধা-কৃষ্ণের অনুসারী হলেও এটি মূলত লোকজীবনের প্রতিচ্ছবি। অনেকে যুক্তি দেখান, রাধা-কৃষ্ণের মাধ্যমে জীবাত্মা-পরামাত্মার প্রেম এখানে ফুটে উঠেছে। তবে কোন প্রকার আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা ব্যতিরেকে পার্থিব জীবনের আলোকেও এ কাব্যের অর্থ ও রস উপভোগ করা যায়।
প্রশ্ন : শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের প্রধান চরিত্র কয়টি? চরিত্রগুলোর পরিচয় প্রদান করুন।
উত্তর : শ্রীকৃষ্ণ কীর্তন কাব্যের প্রধান চরিত্র ৩টি। যথা : রাধা, কৃষ্ণ ও বড়াই।
রাধা : পৌরাণিক কাহিনী মতে রাধা মানব আত্মার প্রতীক। এই মানব আত্মা ভগবানকে পাওয়ার জন্য সবসময় ব্যাকুল থাকে কিন্তু। বড়– চ-ীদাস রচিত ‘শ্রীকৃষ্ণ কীর্তন’ কাব্যে রাধা রক্তে মাংসে গড়া এবং অপূর্ব সুন্দরী নারী যার মধ্যে প্রেম আছে এবং দৈহিক কামনা বাসনা চরিতার্থ করার বাসনা আছে। খুব কম বয়সে তার বিয়ে হয়ে যায়। আয়েন ঘোষ বা অভিমুন্য বা আইহন ঘোষ এর সাথে। তাকে দেখা শোনার দায়িত্ব অর্পণ করা হয় পিসিমা বড়াইকে।
কৃষ্ণ : পৌরাণিক কাহিনী মতে কৃষ্ণ হচ্ছে পরমাত্মা বা ভগবান অর্থাৎ তাঁকে পাবার জন্য মত সারা মানবকুল ব্যাকুল থাকে। বড়– চ-ীদাস রচিত ‘শ্রীকৃষ্ণ কীর্তন’ কাব্যে কৃষ্ণ হচ্ছে রক্ত মাংসে গড়া সুদর্শন এক রাখাল বালক। যার মাঝে প্রেম আছে আবার তার মাঝে দৈহিক কামনা বাসনা চরিতার্থ করার আকাক্সক্ষা আছে। এখানে কৃষ্ণের মৌলিক পরিচয় হলো রাধার প্রেমিক হিসাবে।
বড়াই : এ কাব্যের তৃতীয় চরিত্র হচ্ছে বড়াই। যে বড়াইকে রাধার দেখা শোনার ভার অর্পণ করা হয়েছিল। সেই বড়াই রাধা কৃষ্ণের প্রেমের সম্পর্ক সৃষ্টিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে অর্থাৎ বড়াই হলেন রাধা কৃষ্ণের প্রেমের দূতি।
প্রশ্ন : শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের নামকরণ সম্বন্ধে লিখুন।
উত্তর : শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য যখন আবিষ্কার হবার পর দেখা গেল উপরের কিছু পাতা ছেঁড়া। এ কারণে গ্রন্থটির নাম জানা গেল না। গ্রন্থটির প্রাপ্ত চিরকুটে নাম লিখা ছিল শ্রীকৃষ্ণসন্দর্ভ। এ নামে গ্রন্থটির নামকরণ করা হয় এবং ১৯১৬ সালে তা প্রকাশিত হলো। পরবর্তীকালে প-িতরা এ গ্রন্থটির নামকরণ করলেন শ্রীকৃষ্ণকীর্তন। গ্রন্থটি এখন এ নামে পরিচিত।
প্রশ্ন : শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্যের কবির পরিচয় প্রদান করুন।
উত্তর : এ কাব্যের কবি হলেন বড়– চ-ীদাস। এটি তাঁর ছদ্মনাম বা উপাধি। তার প্রকৃত নাম হচ্ছে অনন্ত বড়–য়া বা অনন্ত বড়াই। তাঁর জন্ম তারিখ নিয়ে মতভেদ রয়েছে। তবে তিনি চ-ীমূর্তি বাসুলীর ভক্ত ছিলেন। তিনি বাংলার সাহিত্যের মধ্যযুগের প্রথম কবি। শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য তিনি রচনা করেন। কবি যাত্রা পালার সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন বলেই এমন চমৎকার নাটকীয় ভঙ্গিতে এটি রচনা করেন।
প্রশ্ন : বৈষ্ণব পদাবলীর পরিচয় প্রদান করুন।
উত্তর : পদ বা পদাবলী বলতে বোঝায় বৌদ্ধ বা বৈষ্ণবীয় ধর্মের গুঢ় বিষয়ের বিশেষ সৃষ্টি। মধ্যযুগে বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ ফসল হচ্ছে বৈষ্ণব পদাবলী। বৈষ্ণব পদাবলী মূলত রাধা কৃষ্ণের প্রেমলীলা সম্বলিত পদাবলী সাহিত্য। বাংলা সাহিত্য মধ্যযুগে একজন মহামানবের আগমন ঘটে তাঁর নাম শ্রীচৈতন্যদেব। তাঁর প্রবর্তিত ধর্মের নাম বৈষ্ণব ধর্ম। শ্রী চৈতন্য দেব ও তাঁর প্রবর্তিত ধর্ম নিয়ে মধ্যযুগে বাংলা সাহিত্যে যে পদাবলী সাহিত্যের সৃষ্টি হয়, তাই বৈষ্ণব পদাবলী নামে পরিচিত।
প্রশ্ন : বৈষ্ণবপদাবলীর শ্রেষ্ঠ কবির কারা?
উত্তর : বৈষ্ণবপদাবলীর কয়েকজন শ্রেষ্ঠ কবি হলেন বিদ্যাপতী, চ-ীদাস, জ্ঞানদাস ও গোবিন্দ দাস। বৈষ্ণব কবিতার তারা চার মহাকবি।
ক. বিদ্যাবতী : বিদ্যাবতী বৈষ্ণব পদাবলীর শ্রেষ্ঠ কবি। তিনি সবচেয়ে বেশি পদাবলী রচনা করেন। তবে তিনি বাঙালি ছিলেন না। আবার বাংলায় কোন পদ রচনা করেননি। তাঁর অধিকাংশ রচনাই সংস্কৃত এবং ব্রজবুলি ভাষায়। তারপরও তিনি বাংলা সাহিত্যে অমর হয়ে আছেন তার সহজ-সরল ও সুমধুর ধ্বনিময় উপস্থাপনার কারণে। তাঁর পদাবলীর কয়েকটি লাইন-
সখি, হামারি দুখক নাহি ওর।
এ ভরা বাদর মাহ ভাদর
শূন্য মন্দির মোর॥
খ. চ-ীদাস : বাংলা ভাষায় বৈষ্ণব পদাবলীর আদি কবি হলেন চ-ীদাস। তাঁর পদের বিখ্যাত লাইন-
“সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই।”
গ. জ্ঞানদাস : সম্ভবত ষোড়শ শতাব্দীতে বর্ধমান জেলায় কবি জ্ঞানদাসের জন্ম। জ্ঞানদাসের একটি পদের দুটি লাইন-
রূপ লাগি আঁখি ঝুরে গুণে মন ভোর।
প্রতি অঙ্গ লাগি কান্দে প্রতি অঙ্গ মোর।
ঘ. গোবিন্দ দাস : বিদ্যাপতির ভাবাদর্শে তিনি বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন, বিদ্যাপাতির অলঙ্কার এবং চিত্রকল্প তাকে মুগ্ধ করেছিল। তাঁর কয়েকটি পঙ্ক্তি :
যাহাঁ যাহাঁ নিকসয়ে তনু তনু জ্যোতি
তাহাঁ তাহাঁ বিজুরি চমকময় হোতি।
প্রশ্ন : বাংলা সাহিত্যে মধ্যযুগে চ-ীদাস সমস্যা নামে একটি সমস্যা রয়েছে। -সে সম্পর্কে লিখুন।
উত্তর : বাংলা সাহিত্যে মধ্যযুগে একাধিক কবি নিজেদের চ-ীদাস পরিচয় দিয়ে যে সমস্যার সৃষ্টি করেছেন তা হলো চ-ীদাস সমস্যা। গবেষকগণ একজন চ-ীদাসের কথা উলেখ করলেও কোন কোন গবেষক একাধিক চ-ীদাসের কথা উলেখ করেছেন। কমপক্ষে চারজন চ-ীদাসের নাম পাওয়া যায়। তারা হলো-
১. বড়– চ-ীদাস, ২. দ্বিজ চ-ীদাস, ৩. দীন চ-ীদাস, ৪. চ-ীদাস
তবে বড়– চ-ীদাস যে শ্রীকৃষ্ণ কীর্তন রচনা করেছেন সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নাই।
প্রশ্ন : ব্রজবুলি ভাষা কী?
উত্তর : বৈষ্ণব পদাবলীর অধিকাংশই রচিত হয়েছে ‘ব্রজবুলি’ নামে এক কৃত্রিম মিশ্র ভাষায়। মূলত এটা মৈথিলি ও বাংলা মিশ্রণে এক মধুর সাহিত্যিক ভাষা। এতে কিছু হিন্দি শব্দও আছে। ব্রজলীলা সম্পর্কিত পদাবলীর ভাষা- এ অর্থে ভাষাটি ব্রজবুলি নামে পরিচিত। ব্রজবুলি কখনো মুখের ভাষা ছিল না; সাহিত্যকর্ম ব্যতীত অন্যত্র এর ব্যবহারও নেই। মিথিলার কবি বিদ্যাপাতি এ ভাষার স্রষ্টা। বিদ্যাপতি ও জয়দেব এ ভাষার দুজন শ্রেষ্ঠ কবি।
প্রশ্ন : মধ্যযুগে যিনি বাংলায় কোন পদ রচনা না করেও বাংলা সাহিত্য অমর হয়ে আছেন তার পরিচয় প্রদান করুন।
উত্তর : বিদ্যাপতি হলেন বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগের প্রধান কবি যিনি বাংলায় কোন পদ রচনা না করেও বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন। বিদ্যাপতিকে মিথিলার কোকিল বলা হয়। কারণ তার জন্ম মিথিলায়। তাঁর উপাধিগুলো ছিল মৈথিল কোকিল, অভিনব জয়দেব, নব কবি শেখর, কবি রঞ্জন, কবি কণ্ঠহার, প-িত ঠাকুর, সাদুপাধ্যায়, রাজপ-িত প্রভৃতি। তিনি ব্রজবুলি নামক একটি কৃত্রিম ভাষায় পদ রচনা করেন।
প্রশ্ন : বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে চৈতন্যদেব কেন স্মরণীয়?
উত্তর : নবদ্বীপে জন্মগ্রহণকারী শ্রীচৈতন্যদেব ভগবত প্রেমে উম্মত্ত হয়ে ওঠেন। মুসলমান শাসন ও ইসলাম ধর্মের সম্প্রসারণে হিন্দু সমাজের যে বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছিল তাকে প্রতিরোধ করার মন্ত্র প্রচার করেন চৈতন্যদেব তাঁর বৈষ্ণব মতবাদের মাধ্যমে। তিনি প্রচার করলেন ‘জীবে দয়া ঈশ্বরে ভক্তি, বিশেষ করে নাম-ধর্ম, নাম-সংকীর্তন’। চৈতন্যদেবের আবির্ভাবে প্রভাব লক্ষ করা যায় তা হচ্ছে, ঐতিহাসিক ও সামাজিক দিক থেকে দেশ জাতীয় মুক্তির পথের সন্ধান পায়। মানব প্রেমাদর্শে সমৃদ্ধ বৈষ্ণব দর্শন ও ধর্ম সম্প্রদায় গড়ে ওঠে এবং অধ্যাত্মভাব, চিত্র সৌন্দর্য ও মধুর প্রেমরসে সমৃদ্ধ বৈষ্ণব সাহিত্য সৃষ্টি হয়।
প্রশ্ন: মঙ্গলকাব্য রচনার সামাজিক কারণ কী?
উত্তর: মঙ্গলকাব্য রচনার মূলে রয়েছে বাংলাদেশের আদি অধিবাসীদের আধিভৌতিক ভয়ভাবনা। তারপর এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক উত্থান-পতনের ইতিহাস। বাংলাদেশ নদীনালা, খালবিল, অরণ্য-জলাভূমিতে ভরা। প্রাকৃতিক উপদ্রবও এদেশে লেগে আছে সর্বদা। ঝড়ঝঞ্ঝা, বন্যা
 ইত্যাদি দুর্যোগ বাঘ, কুমীর-সর্প ইত্যাদি হিংস্র জন্তু, ওলাউঠা-বসন্ত ইত্যাদি ভয়ঙ্কর আধিব্যাধি এদেশের অধিবাসীকে প্রায়ই মৃত্যুকবলিত করত। এই সমস্ত প্রতিকারহীন অদৃশ্য উপদ্রব্যের কাছে তারা নিজেদের বড় অসহায়বোধ করতে লাগল। এ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য তারা বিভিন্ন কাল্পনিক দেব-দেবীর পূজা-অর্চনা করতে লাগল। কখনও কখনও তারা এগুলো লিখে রাখার প্রয়োজনও উপলব্ধি করতে লাগল। আর এভাবেই মঙ্গল কাব্যের উদ্ভব।
প্রশ্ন: মঙ্গলকাব্য কাকে বলে?
উত্তর: যে কাব্যের কাহিনী শ্রবণ করলে সর্ববিধ অকল্যাণ নাশ হয় এবং পূর্ণাঙ্গ মঙ্গল লাভ ঘটে, তাকেই মঙ্গলকাব্য বলে। এটি বাংলা সাহিত্যের মধ্যযুগে বিশেষ এক শ্রেণীর ধর্মবিষয়ক আখ্যান কাব্য। বিভিন্ন দেবদেবীর গুণগান মঙ্গলকাব্যের উপজীব্য। তন্মধ্যে স্ত্রী দেবতাদের প্রাধান্যই বেশি এবং মনসা ও চণ্ডীই এদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন: মঙ্গলকাব্যের প্রধান শাখা কয়টি ও কী কী?
উত্তর: মঙ্গলকাব্যের প্রধান শাখা দুটি : যথা : ১. পৌরাণিক মঙ্গলকাব্য ও ২. লৌকিক মঙ্গলকাব্য। পৌরাণিক শাখার মধ্যে রয়েছে- গৌরীমঙ্গল, ভবানীমঙ্গল, দুর্গামঙ্গল, অন্নদামঙ্গল, কমলামঙ্গল, গঙ্গামঙ্গল, চ-িকামঙ্গল
 ইত্যাদি। লৌকিক মঙ্গলকাব্য হলো শিবমঙ্গল, মনসামঙ্গল, চ-ীমঙ্গল, কালিকামঙ্গল, শীতলামঙ্গল, রায়মঙ্গল, ষষ্ঠীমঙ্গল, সারদামঙ্গল, সূর্যমঙ্গল প্রভৃতি।


কোন মন্তব্য নেই

Class 9-10 Biology New Note

প্রথম অধ্যায় জীবন পাঠ পাঠ সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি  জীববিজ্ঞান : জীববিজ্ঞানের ইংরেজি পরিভাষা ইরড়ষড়মু। ইরড়ষড়মু শব্দটি দুটি  ল্যাটিন ...

fpm থেকে নেওয়া থিমের ছবিগুলি. Blogger দ্বারা পরিচালিত.